কক্সবাজার: কক্সবাজারে এখন ১২ মাসই পর্যটকের সমাগম। পর্যটক আগমনের সিংহভাগের মাধ্যম যাত্রীবাহী বাস। আর এই বাসই এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যত্রতত্র পার্কিং এর ফলে। এতে তৈরি হচ্ছে যানজট, বিঘ্নিত হচ্ছে পর্যটকের স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ। এ নিয়ে স্থানীয় ও পর্যটকরা দোষছেন অবৈধ পার্কিং বাণিজ্য ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের হোটেল-মোটেল জোন, বাস টার্মিনাল থেকে কলাতলী সড়ক ও পর্যটকের সমাগম স্থল কবিতা চত্বর ঝাউবাগানে বাসের অবৈধ পার্কিংয়ের মধ্য দিয়ে রীতিমতো মিনি বাস টার্মিনাল বানিয়ে রাখা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, অন্যদিকে অসুবিধা হচ্ছে ভ্রমণে।
প্রাপ্ত তথ্যের মতে, শহরের শৈবাল মাঠ বাস পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকলেও একাধিক অসাধু সিন্ডিকেট যে যার মতো পার্কিং বাণিজ্য করছে। যার মধ্যে রয়েছে রুম বুকিং চুক্তিতে হোটেল ও কটেজ জোনে প্রাইভেট গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস পার্কিং। ওখানে অনেকে পার্কিংয়ের নামে করছেন চাঁদাবাজী।
অন্যদিকে, পার্কিং বাণিজ্য নিয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে পর্যটকের সমাগম স্থল কবিতা চত্বরকে মিনি টার্মিনাল বানিয়ে রাখা মোহাম্মদ ইলিয়াসের বিরুদ্ধে। যিনি সমুদ্রের বালিয়াড়ি ও ঝাউবাগানে বাস পার্কিং করিয়ে নিচ্ছেন চাঁদা। তার বিরুদ্ধে রয়েছে গাড়ি ধোয়া ও চালক-হেলপারদের গোসল-শৌচাগার ব্যবহারের নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ। ভোগান্তিতে পড়া স্থানীয় ও পর্যটকরা এই অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী করছেন অসাধু চক্র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা রায়হান কবির নামে এক পর্যটক বলেন, ‘স্বস্থির জন্য সমুদ্র নগরীতে এসেও পিছু ছাড়ছে না যানজট। এটি প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা’।
হারুন উর রশিদ নামে স্থানীয় সচেতন এক যুবক বলেন, ‘শহরের শৈবাল মাঠ পার্কিং স্থান হিসেবে নির্ধারিত থাকলেও কবিতা চত্বর ও হোটেল-মোটেল জোনে গাড়ি পার্কিং করছে একটি সিন্টিকেট’।
কবিতা চত্বর পয়েন্টে বেড়াতে আসা পর্যটক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটকের সমাগম স্থল সমুদ্রের পাড় এবং ঝাউবাগানে গাড়ি পার্কিং কোনভাবেই কাম্য নয়। এতে শুধু ভ্রমণেই অসুবিধা হচ্ছে না সেই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে সমুদ্র পাড়ের সৌন্দর্য’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সচেতন যুবক বলেন, ‘চাঁদা নিয়ে সমুদ্রের পাড় ও ঝাউবাগানে বাস রাখছে কবিতা চত্বরের ইলিয়াস। দীর্ঘদিন তার এই অনৈতিক কর্মকান্ডের ফলে সকলেই পড়ছেন ভোগান্তিতে। সে দাপটের সঙ্গে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে’।
এ নিয়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, এতে তার কোনো হাত নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে যাত্রীবাহী বাস পার্কিং করতে আসে। তিনি গাড়ি পরিষ্কার করে এক-দুইশ টাকা পান।
এ প্রসঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, ‘ট্যুরিস্টদের সমাগম স্থল উন্মুক্ত ও নিরাপদ রাখার দায়িত্ব ট্যুরিস্ট পুলিশের। সুতরাং ওসব জায়গায় অবৈধ পার্কিং এর সুযোগ নেই। নির্দেশনা না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ নিশ্চিত করার জন্য অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে শহরে বাস প্রবেশ করানো হয়। পার্কিং হিসেবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে শৈবাল মাঠ। রাস্তার ওপর, হোটেল-মোটেল জোন ও পর্যটক ভ্রমণের জায়গায় গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ। এই নির্দেশনা না মানলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়াও, কবিতা চত্বরে গাড়ি পার্কিংয়ের নামে ইলিয়াসের চাঁদাবাজীর বিষয়ে তিনি অবগত। ইলিয়াস এ অপকর্ম বন্ধ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সচেতন মহলের দাবি, যানজট মুক্ত নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতে দ্রত সময়ের মধ্যে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা হোক।