ঢাকা: গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানো নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বীভৎস বর্ণনা তুলে ধরেছেন এক সাক্ষী। তার নাম মতিবর রহমান ওরফে বুইদ্দা। ৬০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ সেদিন লাশগুলো প্যাকিং করেছেন বলে জানান।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ছয় নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন মতিবর। এদিন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
জবানবন্দিতে মতিবর বলেন, আমি আশুলিয়ায় থাকি। কোনো পড়াশোনা করিনি। ভাঙারির ব্যবসা করি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুর ২টার পর যখন সরকার পদত্যাগ করে তখন মিছিল বের করে ছেলেরা। আশুলিয়ার থানার সামনে দিয়ে মিছিলটি যাওয়ার সময় পুলিশেরা গুলি করে লাশগুলো থানার সামনে নিয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত গুলি চলতে থাকে। সাড়ে ৪টার সময় গাড়ি দিয়ে গুলি করতে করতে চলে যায় পুলিশ।
মতিবর বলেন, ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই জায়গাতেই থাকি আমরা। রাতে বাসায় চলে যাই। এসব লাশ থানার সামনেই পোড়ানো হয়। পরে কেউ রাতের বেলায় বাইপাইল মসজিদের সামনে রেখে আসেন। পরদিন ৬ আগস্ট দুপুর ১২টার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আসেন। সেনাবাহিনী আসেন ২টার দিকে। পরে লাশ ছয়টি পুলিশের গাড়ি থেকে বের করে আমি পলিথিনে প্যাকেট করি। এরপর জানাজা পড়ানো হয়।
তিনি আরও বলেন, চারটি লাশের মধ্যে মোবাইল নম্বর পাওয়া গিয়েছিল। ফোন করা হলে তাদের অভিভাবকরা এসে লাশ নিয়ে যান। তবে দুটি লাশের অভিভাবকদের পাওয়া যায়নি। এজন্য আমতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু একদিন পর হলুদ গেঞ্জি-লুঙ্গি পরা কাউকে দাফন করেছি কিনা আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আবুলের স্ত্রী। আমি এমন একটি লাশ পেয়েছি ও দাফন করেছি বলে জানাই।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন পলাতক আট আসামির পক্ষে সরকারি খরচে নিয়োগ দেওয়া দুই আইনজীবীসহ আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এছাড়া আজ কারাগার থেকে এ মামলার আট আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।