ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাথে কোনো আতাঁত হবে না। এ বিষয়ে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অদক্ষতা ও কার্যকারিতার অভাবের কারণে দেশে-বিদেশে ফ্যাসিবাদের দোসররা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যদি যথাযথ পদক্ষেপ নিত, তবে তারা সাহস করে কোনো অপকর্ম চালাতে পারত না। সরকারের ব্যর্থতা তাদের এই সুযোগ দিয়েছে।’
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নবনির্বাচিত পিরোজপুর জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘দেশবাসী আশা করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় শক্ত অবস্থান নেবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। যাদের হাতে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছিল, সেই ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতাই তাদের সুযোগ করে দিয়েছে।’
নিউইয়র্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে লাঞ্ছিত করার খবর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার। ফখরুল সাহেবকে কেউ লাঞ্ছিত করেনি। আওয়ামী লীগের দোসররা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য গুজব ছড়াচ্ছে। এর মাধ্যমে বিএনপিকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ‘অথর্ব প্রতিষ্ঠান’ আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, ‘দুদক এখনও লুটপাটকারীদের টাকা দেশে ফেরত আনতে পারেনি, দুর্নীতিবাজদের বিচারও করতে পারেনি। ফলে এটি কার্যত অদৃশ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয়েছে। জনগণ এটিকে নাটকীয় সংস্থা হিসেবে দেখছে।’
রিজভী শেখ হাসিনাকে ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের প্রতীক আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘জুলাই শহিদদের রক্ত বৃথা যাবে না। ছাত্রদের গুলি করে, তরুণদের হত্যা করে যারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল, তাদের রক্ত এখনও শুকায়নি। আওয়ামী লীগ যেন আবার খোলস পাল্টে রাজনীতিতে ফিরে আসতে না পারে, এজন্য আমাদের সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। ভেতরে ভেতরে বিভিন্ন চক্র তৎপর। তবে জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। এখন সময় তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার। প্রতিটি ঘরে ঘরে ধানের শীষের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। জনগণ পরিবর্তন চায়, তাই তাদের ভোটের অধিকার রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’
রিজভী নবনির্বাচিত পিরোজপুর ও বরগুনা জেলা বিএনপির নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘তাদের নেতৃত্বে বিএনপি একটি আদর্শ, সুশৃঙ্খল ও গণমুখী রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে। কোনো চাঁদাবাজ, দখলদার বা সমাজবিরোধী সেখানে আশ্রয় পাবে না। নতুন নেতারা জনগণের আস্থা অর্জন করবে। সেই আস্থার ভিত্তিতেই মানুষ ধানের শীষে ভোট দেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী প্রশ্ন তোলেন, ‘যখন শেখ হাসিনা ও তার সরকারের দমননীতি শেষ হয়েছে, পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাস নেই, তখন গত এক বছরে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষেত্রে কেন এত দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে? অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে, ফ্যাসিবাদের দোসররা মাঠে নামবে—এটাই বাস্তব।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের শক্তিই বিএনপির শক্তি। তাই জনগণকে সাথে নিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বহু ধরনের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, নীল নকশা এবং মাস্টার প্ল্যান এখনও শেষ হয়নি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন পর্যন্ত বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে। ওয়াসিম আকরাম, আবু সাঈদ, মুগ্ধদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। এই রক্ত আমাদের গণতন্ত্রের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত অনুপ্রাণিত করবে।’