রংপুর: রংপুরে সংবাদ প্রকাশের কারণে দৈনিক সংবাদ, একুশে টেলিভিশন ও বাংলা ট্রিবিউনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক লিয়াকত আলী বাদলকে অপহরণ, মারধর ও জোরপূর্বক ক্ষমা চাওয়ানোর চেষ্টার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা আন্দোলন করছেন। এ ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার এবং অভিযুক্ত সিটি কর্পোরেশনের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণের দাবিতে তারা পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজ কর্তৃক আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা অংশ নেন। পরে তারা পুলিশ কমিশনার মজিদ আলীর কাছে স্মারকলিপি দেন।
কর্মসূচিতে রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে, রংপুর প্রেসক্লাব, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুর, রংপুর সিটি প্রেসক্লাব, রংপুর রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুর, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুর, রংপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ গণমাধ্যমকর্মীরা বক্তৃতা করেন।
সাংবাদিকরা বলেন, ‘এই ঘটনা সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশা লাইসেন্স বিতরণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন প্রকাশের পর লিয়াকত আলীর ওপর হামলা প্রতিশোধমূলক। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের বদলি এবং দুজন আসামির গ্রেফতারি প্রাথমিক পদক্ষেপ হলেও, সাংবাদিক সমাজের দাবি পূরণে আরও দ্রুত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা প্রয়োজন।’
এর আগে, গত ২১ সেপ্টেম্বর, লিয়াকত আলী বাদলকে কাচারি বাজার থেকে জুলাই যোদ্ধা পরিচয়ে এনায়েত আলী রকি নামে এক যুবকের নেতৃত্বে অপহরণ করে সিটি করপোরেশনে নিয়ে মারধর করা হয়। তাকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমার কাছে জোরপূর্বক ক্ষমা চাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। পরে সিটি করপোরেশনের নতুন ভবনের প্রধান ফটক আটকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মব তৈরি করে মারধর ও হেনস্তা করেন।
লিয়াকত আলী অভিযোগ করেন, তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদে ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশার লাইসেন্স, ৫ কোটি টাকা বাণিজ্যের পাঁয়তারা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এর জেরে তাকে টার্গেট করা হয়। তিনি উম্মে ফাতিমা, মিজানুর রহমান মিজু, সাবেক কাউন্সিলর লিটন পারভেজসহ ১৪ জনের নামে মামলা দায়ের করেন, এবং ২০-২৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
মামলার ঘটনায় মোট দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া, ঘটনার জেরে রংপুর সিটি করপোরেশনের তিন কর্মকর্তাকে অন্য দফতরে বদলি করা হয়েছে।
রংপুর মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টায় নগরীর শালবন মিস্ত্রিপাড়া থেকে রকিবুল ইসলাম সাগরকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি মহসিন মিয়ার ছেলে এবং মামলার ৬ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি। এর আগে সোমবার রাতে ৫ নম্বর আসামি রতন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। রতন মিয়া রংপুর অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আমলি আদালতের বিচারক রাশেদ হোসাইনের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে নিজের এবং অন্য জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন এই জবানবন্দির জন্য আবেদন করেছিলেন।
রংপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজু, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির শান্ত এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তম্ময়কে বদলি করা হয়েছে।