জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনে ফিলিস্তিন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভাষণে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া সময়ের ব্যবধান মাত্র। এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন, ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক মন্তব্যে তিনি ‘ক্ষুব্ধ’।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি ইউরোপের কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে জাপান এখনই সেই পথে হাঁটছে না। ইশিবা বলেন, ‘ইসরাইলি সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিবৃতিতে আমি তীব্র ক্ষুব্ধ যা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলে মনে হচ্ছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের জন্য, প্রশ্নটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে কি না তা নয়, বরং কখন হবে তা। ইসরাইল সরকারের অব্যাহত একতরফা পদক্ষেপ কখনোই গ্রহণ করা যাবে না’।
এরপর তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে এমন আরও পদক্ষেপ নেওয়া হলে, জাপান প্রতিক্রিয়ায় নতুন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে’। জাতিসংঘের প্রায় ৮০ শতাংশ সদস্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, গাজায় প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের পর চলতি সপ্তাহে ব্রিটেন, কানাডা এবং ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাম যুক্ত করেছে।
জি৭-এর সদস্য জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। কিন্তু গাজা ইস্যুতে দুই দেশ একে অপরের বিপরীতে অবস্থান করছে। এশিয়ার অন্যান্য স্থানে, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরও ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইশিবা বলেন, ‘সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফিলিস্তিন টেকসইভাবে টিকে থাকতে পারে, ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসাবে তার ভ‚মিকা গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ফিলিস্তিনি পক্ষকে অবশ্যই এমন একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে যা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।’
আবার জাপানের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ইয়োমিউরি শিমবুন এক সম্পাদকীয়তে সতর্ক করেছে যে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে দেরি করলে জাপানকে ইসরাইলের ‘নৃশংসতাকে নীরবে সমর্থনকারী’ হিসাবে দেখা হতে পারে।
ইয়োমিউরি শিমবুন মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র-জাপান সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় টোকিও এখন সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হলে এবং হামাস গাজা ত্যাগ করলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন।
ইতালির সংবাদমাধ্যম রাই নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে মেলোনি জানিয়েছেন, তার ক্ষমতাসীন জোট সংসদে একটি এই প্রস্তাব আনবে। এরই মধ্যে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা ১৫৯-এ পৌঁছেছে।
১৯৮৮ সালে ইয়াসির আরাফাত প্রথম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দীর্ঘ তিন দশক পর এখন এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন ক্রমশ বাড়ছে।