Saturday 11 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্নীতির দুষ্টচক্রে কুসিক: ট্যাক্স বাড়লেও বাড়েনি নাগরিক সেবার মান

মো. রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:০৩ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:১১

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক)। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা: ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক)। প্রতিষ্ঠার পর নগরবাসীর প্রত্যাশা ছিল নাগরিক সেবার মান বাড়বে, উন্নত নগরায়ণ নিশ্চিত হবে। কিন্তু প্রায় ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রত্যাশা আর বাস্তবতার ব্যবধান দিন দিন বাড়ছেই। নাগরিক সুবিধা তো বাড়েইনি, বরং বেড়েছে হোল্ডিং ট্যাক্স, দুর্নীতি ও অনিয়মের জাল। অভিযোগ উঠেছে—এখানে নিয়ম মানতে চাইলে বাধা, কিন্তু টাকা দিলে সব অনিয়মই পরিণত হয় নিয়মে।

৫৩.৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সিটি করপোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ডে বাস করেন প্রায় ৮ লাখ মানুষ। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে আসেন এখানে। কিন্তু নাগরিক সেবার বদলে তারা পড়ছেন দুর্নীতির দুষ্টচক্রের কবলে। অভিযোগ আছে, সিটিকরপোরেশনের ভেতরে গড়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। নিয়মনীতি অমান্য করে ভবন অনুমোদন, জলাশয় ভরাট, নকশা বদল, ট্যাক্স সমন্বয় থেকে শুরু করে সরকারি ঠিকাদারি পর্যন্ত—সবকিছুতেই এই সিন্ডিকেটের ‘চুক্তি সংস্কৃতি’। আপনি টাকা দিলে, অনিয়মকেও নিয়মে পরিণত করা হবে।

বিজ্ঞাপন

উঁচু ভবনের নামে কোটি কোটি টাকার লুটপাট

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ভবন নির্মাণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী যেখানে সর্বোচ্চ ৩.৬ বা ৯ তলার অনুমোদন, সেখানে সিন্ডিকেটচক্র কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে অনুমোদন দিয়েছে আরও উঁচু ভবনের। শুধু তাই নয়, ডোবা–পুকুর ভরাট, নির্দিষ্ট খালি জায়গা না রেখে ভবন নির্মাণ, এমনকি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই আবাসিক–বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা—সবই এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ তথ্য।

সূত্র জানায়, অনেক ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের ভেতরকার সার্ভেয়ারদের মাধ্যমেই এই অনিয়ম বৈধতা পায়। ফলে শহরজুড়ে বেড়ে চলেছে অপরিকল্পিত বহুতল ভবন, সংকুচিত হচ্ছে খোলা জায়গা, হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও নাগরিক নিরাপত্তা।

অভিযোগ আছে, সিটি করপোরেশনের অনেকে বছরের পর বছর একই পদে থেকে সুবিধাভোগ করছেন। কেউ কেউ আবার একাধিক দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করছেন। করপোরেশনের চাকরিতে থেকেও পরিবারের নামে ঠিকাদারি ব্যবসা করা, ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে চুক্তি করা, সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে নিজস্ব বাড়ির ট্যাক্স নির্ধারণ—সবই এই সিন্ডিকেটের প্রকাশ্য অনিয়ম।

কুমিল্লার প্রবীণ সাংবাদিক সেলিম রেজা মুন্সী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর নাগরিক সেবার মান বাড়েনি, বরং দুর্নীতির কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়েছে। লোকবল কম থাকলেও সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য বেশি। তবে নতুন প্রশাসক এলে পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে।’

নগরবাসীর অভিযোগ, সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুল আলমের আমলেই সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন ভবন অনুমোদন দিয়ে গেছেন , আর বর্তমানে সেই খাত থেকে মাসিক ভাগ নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণেও নিয়মিত অনিয়ম হয়েছে। কেউ আপত্তি তুললেই সিন্ডিকেট চেষ্টা করেছে তাকে ম্যানেজ করার।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্রশাসক মো. শাহ আলম দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেন, ‘আমি প্রশাসক হিসেবে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। কোথায় কোথায় অনিয়ম হয়েছে, তা চিহ্নিত করছি। আইন অনুযায়ী প্রতিটি অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একটি টিম গঠন করেছি যারা নতুন নির্মাণাধীন ভবনগুলো নজরদারিতে রাখছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান জিরো টলারেন্স।’

সারাবাংলা/এসএস

কুসিক ট্যাক্স দুর্নীতি দুষ্টচক্র নাগরিক সেবা বাড়লে বাড়েনি মান