পঞ্চগড়: জোহরের নামাজে ফরজ শেষে সুন্নত না পড়ায় এক মাদরাসা ছাত্রকে মুখে টুপি গুঁজে বেধরক মারধরের অভিয়োগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পঞ্চগড় সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে, বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে জেলা শহরের লিচুতলা এলাকার আত-তাক্বওয়া ওয়াসসুন্নাহ হিফজ মাদরাসায়। মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হাফেজ মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে উঠেছে এমন গুরুতর অভিযোগ।
আসাদুজ্জামান আসাদসহ তিন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগ জমা দিয়েছেন ওই মাদরাসা ছাত্রের বাবা বেলাল হোসেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সাব্বির হোসেন নাসির (১২)। তার বাড়ি সদর উপজেলার পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া এলাকায়। সে মাদরাসাটিতে হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করছে।
জানা গেছে, গত তিন মাস আগে মাদরাসাটিতে হেফজ বিভাগে ভর্তি হয় নাসির। ভর্তির কিছুদিন পরেই একবার মারধরের শিকার হয় সে।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষক।
অভিযোগ অনুযায়ী, শিক্ষক প্রথমে নাসিরের মুখে টুপি গুঁজে দেন এবং পরে লাঠি দিয়ে সেটি গলার ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ছাত্রটির মুখের তালুর কয়েকটি স্থানে ছিলে যায়। এরপরও শিক্ষক ক্ষান্ত হননি। কয়েকজন ছাত্র নাসিরের হাত ধরে রাখেন এবং শিক্ষক তার দুই হাত, ঘাড়, গলা ও কোমরের নিচে লাঠি দিয়ে মারতে থাকেন। কোনোভাবে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাকে আবার শিক্ষকের সামনে আনা হয় এবং পুনরায় মারধর করা হয়।
ভুক্তভোগী মাদরাসা ছাত্র সাব্বির হোসেন নাসির বলেন, ‘আমি সুন্নত নামাজ না পড়ায় আসাদ হুজুর আমাকে মারধর শুরু করে। আমি চিৎকার করলে আমার মুখে টুপি গুঁজে দিয়ে মারতে থাকে। কয়েকজন ছাত্র হাত ধরে থাকে আর তিনি আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারতে থাকেন। যেভাবে আমার মুখে টুপি গুঁজে দিয়েছে আরেকটু হলে আমি মরেই যেতাম। আমার গলা দিয়ে রক্ত বের হয়ে গেছে।’
বাবা বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলেকে এর আগেও নির্যাতন করা হয়েছে। ওইদিন যেভাবে মুখে টুপি গুঁজে দিয়ে মারধর করা হয়েছে তা বর্ণনা করার মতো নয়। কোনো সুস্থ মানুষ একটা শিশুটিকে এভাবে মারধর করতে পারে না। আমার ছেলেকে তারা মেরে ফেলতে চেয়েছিল, সে কোনমতে পালিয়ে বেঁচে গেছে। এখন আবার আসাদ হুজুর আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আমরা ন্যায় বিচার চাই।’
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) রহিমুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুটির শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে সে হাসপাতালেই ভর্তি আছে। আমরা তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি।’
পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, ‘শিশু নির্যাতনের অভিযোগে তার বাবা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন। অভিযোগের অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’