Saturday 27 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাঝারি থেকে বড় বন্যার আশঙ্কা, ক্ষতি হতে পারে জিডিপি’র ৪ শতাংশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:০৭

-ছবি : প্রতীকী

ঢাকা: চলতি অর্থবছরে একটি মাঝারি থেকে বড় বন্যার আশঙ্কা করছে সরকার। গত ৪০ বছরের বন্যাজনিত ক্ষতির গড় হিসাবে এতে ভৌত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে জিডিপি’র ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর বিপরীতে অভিযোজন সক্ষমতার গড় মান হচ্ছে ১ শতাংশেরও কম (০.৭৮ শতাংশ)। আর দুর্যোগ-পূর্ববর্তী সময়ে সরকারের বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।

‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামষ্টিক-আর্থিক ঝুঁকি’ সংক্রান্ত অর্থ বিভাগের এক পর্যবেক্ষণে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর হিসাব মতে, গত ছয় বছরে (২০১৬-২০২১) প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে গড়ে প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ জিডিপি’র ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

অর্থ বিভাগ বলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বাজেট ঘাটতি এবং সরকারের ঋণ ও ব্যয় বাড়তে পারে। এর মধ্যে ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং সরকারি ব্যয় ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়বে। ত্রাণ কার্যক্রম ও ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠনে সরকারের এ ব্যয় বাড়বে। পাশাপাশি দুর্যোগের ফলে অবকাঠামোগত ক্ষতি, কৃষি উৎপাদনে ঘাটতি ও ব্যক্তিগত ভোগব্যয় কমে যাওয়ার কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমতে পারে দশমিক ৪৮ শতাংশ। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছরেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

‘বিশ্ব ঝুঁকি সূচক ২০২৪’ অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বে ৯ম সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা অধিক হারে সংঘটিত হয়। এর ফলে প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলারের অধিক এবং জিডিপি’র প্রায় ১ শতাংশ। একই সঙ্গে দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬৩ লাখ মানুষ।

‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন দেশের দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়নে বড় ঝুঁকি তৈরি করছে’ উল্লেখ করে অর্থ বিভাগ বলছে, বাংলাদেশের নিচু ভূমি, ঘন জনসংখ্যা ও কৃষির ওপর নির্ভরতা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আর যেহেতু এ ধরণের ঘটনা ঘন ঘন ঘটে, তাই আর্থিক ক্ষতি কমাতে এবং জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে সঠিক মূল্যায়ন ও কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।

অর্থ বিভাগ-এর হিসাব মতে, অভিযোজন কৌশলের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতি বছর বাজেটের ৬ থেকে ৭ শতাংশ জলবায়ু সহনশীলতা তৈরির জন্য ব্যয় করা হয়। এর প্রায় ৭৫ শতাংশই সরকারি অর্থায়ন।

সরকারি সূত্রগুলো জানায়, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার একটি ‘দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন কৌশলপত্র’ প্রণয়ন করেছে। এতে মধ্য মেয়াদে বিভিন্ন ঝুঁকি অর্থায়নের উত্তম বিকল্পের মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া একটি সামগ্রিক দুর্যোগে প্রস্ততি এবং সাড়া প্রদান কৌশলপত্র প্রণয়নের পরিকল্পনা রয়েছে।

সরকারি হিসাবে, গত ৪০ বছরে দেশে ১৩টি বড় ধরণের বন্যা ও ৮টি ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত সম্ভাব্য ঝুঁকি বিশ্লেষণে ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’ (আইএমএফ)-এর সহায়তায় ‘ক্লাইমেট ম্যাক্রো-ফ্রেমওয়ার্ক টুলকিট (সিএমটি) প্রণয়ন করেছে সরকার। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হয়। সিএমটি’র প্রধান তিনটি অঙ্গ হচ্ছে- প্রাকৃতিক দুর্যোগ ড্যাশবোর্ড; পরিসংখ্যানভিত্তিক বিশ্লেষণ টুল এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো।

অর্থ বিভাগ জানায়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আগামী ২০২৭-২৮ অর্থবছর পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বিশ্লেষণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সিএমটি মডেলে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে একটি মাঝারি থেকে বড় ধরণের বন্যা হবে।

সারাবাংলা/আরএস

অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ ক্ষয়ক্ষতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ-বন্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর