চট্টগ্রাম ব্যুরো: নিয়ম না মেনে ঋণ বিতরণ করে সুদে-আসলে প্রায় ১৯০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের সাত কর্মকর্তাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঋণগ্রহীতা ও জামানত প্রদানকারী হিসেবে নুরজাহান গ্রুপের তিন কর্ণধারসহ চারজনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ জালাল সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন। দুদকের চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ সারাবাংলাকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- নগরীর আছাদগঞ্জ শাখার সাবেক প্রিন্সিপ্যাল অফিসার মোস্তাক আহমেদ, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. আবুল হোসেন তালুকদার, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, সিলেট সার্কেলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম ও সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক তাজরীনা ফেরদৌসি, প্রধান শাখার সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. মোফাজ্জল হোসেন এবং অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
আরও যারা আসামি হয়েছেন তারা হলেন- চট্টগ্রাম নগরীর আছাদগঞ্জের ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিজান ট্রেডিংয়ের মালিক মো. মিজানুর রহমান এবং নুরজাহান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাসমীর ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের পরিচালক জহির আহমেদ, টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ার।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১০ সালে মেসার্স মিজান ট্রেডার্সের মালিক মিজানুর রহমান অগ্রণী ব্যাংকের নগরীর আছাদগঞ্জ শাখায় ছোলা ও গম আমদানির জন্য দুটি আলাদা ঋণপত্র খোলেন। এ ঋণপত্রের বিপরীতে তাকে ১৭টি শর্তসাপেক্ষে ১২৬ কোটি ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকা ঋণ প্রদানের অনুমোদন দেয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ২০১১ সালে দুটি ঋণপত্রের বিপরীতে তাকে ১২০ দিনের মধ্যে ফেরতযোগ্য মোট ৫১ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।
কিন্তু ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১২ সালের ৩১ মার্চ সেটা পুনঃতপশীল করা হয়। ঋণের আবেদনে মিজানুর রহমানের জামিনদার হয়েছিলেন নুরজাহান গ্রুপের তিন কর্ণধার। মিজানুর রহমান ঋণ পরিশোধ না করায় পরবর্তী সময়ে জামিনদার মেসার্স জাসমীর ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের পরিচালক জহির আহমেদকে তার ব্যাংকের ঋণ হিসেব পরিচালনার জন্য মনোনীত করা হয়। কিন্তু সেই ৫১ কোটি টাকা ঋণ যা সুদে-আসলে গিয়ে দাঁড়ায় ১৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা আর পরিশোধ করা হয়নি।
দুদকের অনুসন্ধানে এসেছে, ব্যাংকের পরীক্ষিত গ্রাহক না হওয়ার পরও মিজানুর রহমানকে ঊর্ধ্বতন পাঁচ কর্মকর্তার সুপারিশে প্রথম ঋণের আবেদন মঞ্জুর করা হয়। এক্ষেত্রে ঋণবিতরণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। সহজে নগদায়নযোগ্য তরল সম্পদ কিংবা শহরে ঋণের বিপরীতে দ্বিগুণ মূল্যের সম্পত্তি জামানত হিসেবে রাখার নিয়মও অনুসরণ না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাতের অভিপ্রায়ে ঋণ দেওয়া হয়, যা আর ব্যাংকে ফেরত আসেনি।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।