Sunday 28 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওসি নয়, যেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর!
তথ্য চাইলে বলেন— ‘ফেসবুকে আছে’

জুলফিকার তাজুল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:৩০ | আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:৩৪

কোম্পানিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রতন শেখ। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

সিলেট: সাংবাদিক বা কেউ ফোন করলে তথ্য দেওয়ার বদলে বলেন— ‘ফেসবুকে আছে’। কোম্পানিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ঘটনার তদন্ত বা জবাবদিহিতার চেয়ে ফেসবুক লাইভ এবং ভিডিও মেকিং নিয়েই বেশি ব্যস্ত রতন শেখ। তার এমন কার্যক্রমে বিরক্ত সাধারণ মানুষ; এমনকি প্রশ্ন উঠছে একজন সরকারি কর্মকর্তার আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। অনেকেই বলছেন, ওসি রতন শেখ পুলিশের চেয়ে বেশি যেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর।

জানা গেছে, কিছুদিন আগে কোম্পানিগঞ্জে সাদাপাথর লুট কাণ্ডের পর ওসি ওজায়ের-এর বদলে দায়িত্ব পান ওসি রতন শেখ। অনেকের প্রত্যাশা ছিল, তিনি হয়তো এলাকায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার কর্মকাণ্ড ঘিরে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিক বা সাধারণ নাগরিকরা যখন কোনো তথ্য জানার জন্য ফোন দেন, তখন রতন শেখ সংক্ষিপ্তভাবে বলেন— ‘ফেসবুকে বিস্তারিত আছে’ কিংবা ‘কমেন্টে দেখেন।’ এমনকি গুরুত্বপূর্ণ মামলার অগ্রগতির তথ্য জানতে চাইলেও তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘আপডেট ফেসবুকে দেওয়া হবে।’ তথ্য গোপন করা বা সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ার এমন প্রবণতা পেশাদারিত্বের চেয়ে দায়িত্বহীনতা বলেই মনে করছেন অনেকে।

ওসি রতন শেখের নিজস্ব ফেসবুক পেইজে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের তথ্য। ছবি: সংগৃহীত

ওসি রতন শেখের নিজস্ব ফেসবুক পেইজে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের তথ্য। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ধলাই ব্রিজের নিচে বসে ফেসবুক লাইভ করার দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। আবার মাদক উদ্ধার অভিযানে গিয়ে ভিডিও বানিয়ে তা ফেসবুকে পোস্ট করে প্রশংসা কুড়ানোর চেষ্টা করতেও দেখা গেছে তাকে। সর্বশেষ, সাদাপাথর ঘুরতে গিয়ে পর্যটকের প্রাইভেটকার চুরি হয়েছে। কিন্তু এ ঘটনায় পুলিশের তৎপরতার চেয়ে ওসির ফেসবুক পোস্ট নিয়েই বেশি সমালোচনা চলছে। বিষয়টি ঘিরে জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এটা কি পুলিশের কাজ? ঘটনা ঘটে আর ওসি সাহেব স্ট্যাটাস দেন! জনগণ তো ফেসবুকে নয়, নিরাপত্তা চায় বাস্তবে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বদলে যদি একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিজের ‘সোশ্যাল মিডিয়া ইমেজ’ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?— এমন প্রশ্ন এখন কোম্পানিগঞ্জবাসীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

ওসি রতন শেখের কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা। ছবি: সংগৃহীত

এ ব্যাপারে ওসি রতন শেখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটা ইনফরমেশনের জন্য প্রতিদিন শত শত ফোন কল আসে। বাধ্য হয়ে ফেসবুক পেইজে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে বলে জানাই। আমি তো আর জনপ্রতি লিখে লিখে ইনফরমেশন দিতে পারব না।’ লাইভ নিয়ে ব্যস্ত থাকার অভিযোগে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনের কার্যক্রম, মাদক উদ্ধার, অভিযান, তল্লাশি- এসব ফেসবুকে মাঝে-মধ্যে ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করি। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।’

সিলেট জেলা বারের আইনজীবী মো. তাজ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা কোনো মিডিয়ায় বক্তব্য প্রদান বা কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে পারবেন না। দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট দফতর ওই কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

শুধু তাই নয়, তার নিজস্ব ফেসবুক পেজ থেকে এসব কন্টেন্টে আয় হলে, সেটা অবৈধ বাণিজ্য হিসেবে গণ্য হবে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/পিটিএম

ওসি কন্টেন্ট ক্রিয়টর টপ নিউজ রতন শেখ

বিজ্ঞাপন

এনবিআর পরামর্শক কমিটি বিলুপ্ত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:২২

আরো

সম্পর্কিত খবর