ঢাকা: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শেষের পথে। অষ্টমীর পর আজ বুধবার (১ অক্টোবর) পালিত হচ্ছে মহানবমী। দেবী দুর্গার বিদায়ের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে, কারণ বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে কৈলাশে ফিরে যাবেন দেবী।
মহানবমীতে সকালে দুর্গার মহাস্নান ও ষোড়শ উপচারে পূজা সম্পন্ন হয়। পুরোহিতদের বর্ণনায়, এদিন দেবীকে ১০৮টি নীলপদ্ম, নীল অপরাজিতা ও নীলকণ্ঠ ফুল দিয়ে পূজা করা হয়। এছাড়া যজ্ঞের মাধ্যমে দেবীর কাছে বেল পাতা, আম কাঠ ও ঘি অর্পণ করা হবে। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মহাআরতি, যেখানে ভক্তরা ঢাক-ঢোল আর শঙ্খধ্বনিতে মুখর হয়ে অংশ নেবেন।
অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে পালন করা হয় সন্ধিপূজা। এই সময়কে মহাশক্তির আবির্ভাবের ক্ষণ ধরা হয়। কাহিনী অনুসারে এই মুহূর্তে দেবী চামুণ্ডা রূপে মহিষাসুরের সেনাপতি চণ্ড-মুণ্ডকে বধ করেন, যা দেবীর মহাশক্তি প্রকাশ করে এবং অশুভ শক্তির পতন হয়। তাই নবমীকে ‘বিজয়ের প্রাক্কাল’ বলা হয়।
নবমীর পূজা মানে হলো অশুভ শক্তির অবসান ঘটিয়ে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার সংকল্প। তাই এই দিন ভক্তরা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন নিজের ভেতরের অন্ধকার, ভয়, অন্যায় ও কুসংস্কারের বিনাশের জন্য।
নবমীতে বিশেষ হোমযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। অগ্নির মাধ্যমে দেবীর উদ্দেশ্যে আহুতি দেওয়া হয়। ভক্তরা মনে করেন এর দ্বারা জীবন থেকে দুঃখ, দারিদ্র্য ও অশুভ শক্তি দূর হয়। এছাড়া নবমীর অঞ্জলি হলো ভক্তি নিবেদনের অন্যতম পূর্ণতা।
নবমী মানেই বিদায়ের সুর। এদিনের বিশেষত্ব ১০৮ পদ্মের পূজা। বৃহস্পতিবার বিসর্জনের পর দেবী আবার বছর ঘুরে আসবেন, কিন্তু এই বিদায়ের অনুভূতি ভক্তদের হৃদয় ভারাক্রান্ত করে তোলে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য হলো মানুষের অন্তরের অসুরিক প্রবৃত্তি—কাম, ক্রোধ, হিংসা ও লালসা বিসর্জন দিয়ে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তাই মহানবমীর পূজা শেষ হলেও ভক্তদের মনে বাজতে থাকে একটাই সুর—’ওরে নবমী নিশি, না হইও রে অবসান।’