ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের সঙ্গে প্রতারণা, হুন্ডি পরিচালনা ও স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে ৬০৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিআইডি। এদের মধ্যে অজ্ঞাতনামা ৭ জন আসামি রয়েছে।
বুধবার (১ অক্টোবর) সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানান।
মামলায় চিহ্নিত ৬ আসামি হলেন- মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস (৫০), ওয়াহিদুজ্জামান (৫২), মো. গোলাম সারওয়ার আজাদ (৫১), মো. তরিকুল ইসলাম @ রিপন ফকির (৪৯), রাজীব সরদার (৩৭) এবং উজ্জ্বল কুমার সাধু (৩৮)।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা, হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনা ও স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সিআইডি এজাহারনামীয় ৬ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৫ থেকে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের নাগরিক কর্তৃক একজন মার্কিন নাগরিক প্রতারিত হলে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সহযোগিতামূলক যোগাযোগের সূত্র ধরে সিআইডি অনুসন্ধান কাজ শুরু করে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, মার্কিন নাগরিক ডেবোরাহ জন্সটন রামলো ‘ডেবি’-এর সাথে এই প্রতারকচক্র বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে সখ্যতা গড়ে তোলে।
তিনি বলেন, অভিযোগের ভাষ্যমতে এই প্রতারকচক্র তাদেরকে ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির পরিচয় দিয়ে ২ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার ৩৫১ টাকা) আত্মসাৎ করে।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, অনুসন্ধানে দেখা যায়- এই অর্থ প্রতারকচক্র ছল-চাতুরী ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে আমেরিকার ভুক্তভোগী নাগরিককে বাধ্য করে যেন তিনি আমেরিকায় অবস্থিত বিভিন্ন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিকট এই আত্মসাৎকৃত অর্থ প্রেরণ করেন। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে এসকল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নিকট থেকে অভিযুক্তরা তাদের বিভিন্ন নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক একাউন্টে টাকা গ্রহণ করে। অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধ প্রতারণা ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, সংঘবদ্ধ প্রতারণা ও হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনায় অভিযুক্তরা নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলে দীর্ঘদিন ধরে বড় অংকের টাকা লেনদেন করে আসছে। অনুসন্ধানে উঠে আসা এসব প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- আইনক্স ফ্যাশন, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, জামান এন্টারপ্রাইজ ও নোহা এন্টারপ্রাইজ। তন্মধ্যে আইনক্স ফ্যাশন এর নামে ইউসিবিএল-এ ১টি ব্যাংক একাউন্ট, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের নামে ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এবি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংকে পৃথক ৪টি ব্যাংক একাউন্ট, জামান এন্টারপ্রাইজের নামে ব্র্যাক ব্যাংকে ১টি ব্যাংক একাউন্ট এবং নোহা এন্টারপ্রাইজের নামে সাউথ-ইস্ট ব্যাংকে ১টি ব্যাংক একাউন্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এসব ব্যাংক একাউন্টে বিপুল পরিমাণ আয়-বহির্ভূত লেনদেনের রেকর্ড রয়েছে। এছাড়াও মামলায় অভিযুক্ত মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস নামীয় একাউন্টেও অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন নাগরিকের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগটি অনুসন্ধানকালে উঠে আসে অভিযুক্তরা স্বর্ণ চোরাচালান কারবারের সাথেও জড়িত। তারা বিশেষ যোগাযোগের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য হতে আগত ব্যক্তিদের নিকট হতে ও ঢাকার তাঁতীবাজারসহ অন্যান্য স্থানের বিভিন্ন দোকান হতে ভাঙ্গারি স্বর্ণ সংগ্রহ করে তা গলিয়ে পাকা সোনার বার আকারে দীর্ঘদিন ধরে পাচার করে আসছে। এসব পাচারকৃত সোনার বার মূলত সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে অভিযুক্তরা প্রায় ৬০৮ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ৩৭২ টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করে ভোগ-বিলাস, অর্থ পাচারসহ নামে-বেনামে সম্পত্তির মালিক হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় ডিএমপির কোতয়ালী থানায় ৩০ সেপ্টেম্বর মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করে সিআইডি। মামলার পূর্ণ রহস্য এবং অজ্ঞাতনামা অন্যান্য আসামিদের শনাক্তসহ তাদের আইনের আওতায় আনার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।