Sunday 05 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দীর্ঘ ১৬ বছর পর ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪৪ ধারা ছাড়াই দূর্গাপূজা উদযাপন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২ অক্টোবর ২০২৫ ১১:১৮ | আপডেট: ২ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৫১

পূজামণ্ডপের তোরণ। ছবি: সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁও: দীর্ঘ ১৬ বছর পরে হানাহানি, মারামারি, ভেদাভেদ ও দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের শ্রী শ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরে দূর্গাপূজা সম্পন্ন হচ্ছে আজ। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন যিনি, তিনি হচ্ছেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা। আর এতে সহযোগিতা করেছেন রাজনৈতিক নেতাসহ প্রশাসনের অনেকেই।

দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ গ্রামে শ্রী শ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরের জমি-জমা এবং দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মালম্বী এবং ইস্কন মতাদর্শের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। ২০০৯ সালে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ফুলবাবু নামে একব্যক্তি মারা যান। বিরোধ নিরসনে বার বার আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় প্রশাসন। আর এর জন্য দায়ী বলে জানান বিগত সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন।

বিজ্ঞাপন

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিবছর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে জারি করা হতো ১৪৪ ধারা। ১২ বছরে ১২ বার জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। অবশেষে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইরশাদ ফারজানার আন্তরিক প্রচেষ্টায় উভয় পক্ষই দ্বন্দ্ব আর ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একত্রিত হয়ে আয়োজন করেন এবারের দূর্গাপূজা। এতে করে উভয়ের মধ্যে যেমন ভাতৃত্ববোধের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি বিরাজ করছে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যে প্রশান্তির এক ছায়া।

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা গত ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করতে এসে সাংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, পূজার পরে উভয় পক্ষকে নিয়ে স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এরই প্রতিফলন ঘটেছে এবারের দূর্গাপূজায়। দীর্ঘ ১৬ বছর পরে সকলে হানাহানি, মারামারি, ভেদাভেদ ও দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে একত্রিত হয়ে দূর্গাপূজা পালন করছেন।

পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ভবেশ চন্দ্র রায় বলেন, বিগত সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের গাফিলতির কারনে উভয় পক্ষের দ্বন্দ্বে ২০০৯ সালে এক ব্যক্তি মারা যান। এরপর থেকে পূজার সময় ১৪৪ ধারা জারি করা হতো।

হিন্দু নেতা ও সিনিয়র আইনজীবী ইন্দ্র নাথ রায় জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এক অপশক্তির কারনে এটা বাধাগ্রস্থ হয়েছিল। বর্তমান জেলা প্রশাসক আসার পরে উনি এবং উনার প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে একটা পর্যায় নিয়ে এসেছেন। যেটা আগের প্রশাসন কখনোই করতে পারেননি।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সাল আমিন বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর পরে সকলে মিলে দূর্গাপূজার যে আয়োজন করা হয়েছে, এটা সকলের জন্য অত্যান্ত আনন্দের।

বিএনপি’র এই নেতা বলেন, ‘এই দেশ আমাদের, এখানে সব ধর্মের মানুষের বসবাস। এই দেশকে আমরা সকলে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা থেকেই সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি সাম্যের বাংলাদেশ, মর্যাদার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।’

এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, আজকে যে পরিবেশ বিরাজ করছে অত্যন্ত আনন্দের। উৎসব একা একা করার না, উৎসবটা সবাইকে নিয়ে করার। আগামীতেও নিজেদের মধ্যে যে বিভেদগুলো আছে, তা ভুলে গিয়ে উৎসবে এক হবো এবং বাংলাদেশকে নিয়ে একসঙ্গে ভাববো।’

সারাবাংলা/জিজি

১৪৪ ধারা ঠাকুরগাঁও দূর্গাপূজা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর