ঢাকা: কলম-মোবাইল-বেগুন-বালতি বা হেলিকপ্টার বা অন্য কোনকিছু নয়, রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাধ্যমে হলেও প্রতীক শাপলাই চাই, এমনটাই জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির ( এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা।
সারাবাংলাকে তিনি বলেন,শাপলা প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন স্বেচ্ছাচারী এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। কমিশন তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও জানান তিনি। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, এসব কাজের মাধ্যমে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে ইসির সার্বিক সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের চিঠি অনুযায়ী আমরা ৭ অক্টোবরের মধ্যেই জানিয়ে দেব শাপলা ছাড়া অন্য প্রতীক বরাদ্দ নেব না।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব নিয়ম-কানুন মেনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দাবিকৃত ‘শাপলা’ প্রতীকের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন ইসি আবদুর রহমানেল মাসউদ।
ইসি আবদুর রহমানেল মাসউদ সারাবাংলাকে বলেন, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ইসির নিয়মকানুনে যে সমস্ত ফ্যাক্টর কাজ করে, সেগুলো নিয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
সম্প্রতি, শাপলা নয়, বরং কলম-মোবাইল-হেলিকপ্টার-বেগুন, বালতিসহ ৪৬টি প্রতীক থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) নিজেদের মার্কা বাছাই করে চলতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংস্থাটির নির্বাচন সহায়তা শাখার উপ-সচিব মো. রফিকুল ইসলাম দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে এরইমধ্যে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে-নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’, যা প্রাথমিক পর্যালোচনায় বিবেচিত হয়েছে। আবেদনপত্রে প্রতীক হিসেবে পছন্দের ক্রমানুযায়ী শাপলা, কলম ও মোবাইল উল্লেখ করা হয়।
যা পরবর্তীতে ৩ আগস্ট পরিবর্তন (শাপলা, লাল শাপলা বা সাদা শাপলা) করা হয়। উল্লেখ্য যে, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯(১) মোতাবেক প্রার্থীর প্রতীক ‘শাপলা’ অন্তর্ভুক্ত নেই।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এ আদেশ বা বিধিমালার অধীন অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনে কোনো দল কর্তৃক মনোনীত সব প্রার্থীর জন্য নির্ধারিত প্রতীক থেকে পছন্দকৃত যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে এবং এইভাবে বরাদ্দকৃত প্রতীক দলটির জন্য সংরক্ষিত থাকবে, যদি না তা পরবর্তীকালে নির্ধারিত প্রতীকগুলোর মধ্য থেকে অন্য কোনো প্রতীক লাভের জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে।
এমতো অবস্থায়, দলের নিবন্ধনের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯ (১) এ উল্লিখিত প্রতীকের তালিকা হতে বরাদ্দ হয়নি, এমন একটি প্রতীক পছন্দ করে নির্বাচন কমিশনকে আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে লিখিতভাবে অবহিত করার জন্য জন্য বলা হয় চিঠিতে।
এনসিপিকে যে সব প্রতীক পছন্দ করতে বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে; খাট, আলমিরা, উটপাখি, ঘুড়ি, কাঁপ-পিরিচ, চশমা, দালান, বেগুন, চার্জার লাইট, কম্পিউটার, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, ফ্রিজ, তবলা, বক ,মোরগ,,কলম, তরমুজ,বাঁশি, লাউ,কলস, চিংড়ী, থালা, বেঞ্চ,লিচু, দোলনা, প্রজাপতি, বেলুন, ফুটবল, ফুলের টব, মোড়া, বালতি, কলা, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক,ময়ূর, মোবাইল ফোন, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, স্যুটকেস, হরিণ ও হাঁস।
এ নিয়ে ইসির সিনিয়র সচিব গণমাধ্যমকে জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিলে যে ১১৫টা প্রতীক আছে সেখানে শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলা নেই। তাই শাপলা প্রতীক এনসিপি পাবে না। এটা আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
এরপর এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে এসে শাপলা প্রতীক না পেলে তা আদায় করে নেওয়ার হুমিক দেয়। তবে সে হুমকিকে উড়িয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা অনেক কথা বলেন। এটা উনাদের বলার অধিকার আছে। উনারা বলতে পারেন আমরা তো আর সেরকম জবাব দিতে পারবো না।’
ইসিতে মোট ১১৫ টি প্রতীক রয়েছে। সেগুলো হলো-আপেল, আনারস, আম, আলমারি, ঈগল, উটপাখি, উদীয়মান সূর্য, একতারা, কাঁচি, কবুতর, কলম, কলস, কলার ছড়ি, কাঁঠাল, কাপ-পিরিচ, কাস্তে, কেটলি, কুমির, কম্পিউটার, কলা, কুড়াল, কুলা, কুঁড়েঘর, কোদাল, খাট, খেজুর গাছ, গরুর গাড়ি, গাভি, গামছা, গোলাপ ফুল, ঘণ্টা, ঘুড়ি, ঘোড়া, চাকা, চার্জার লাইট, চাবি, চিংড়ি, চেয়ার, চশমা, ছড়ি, ছাতা, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিলঘড়ি, ট্রাক, টেলিফোন, টেলিভিশন।
আরও আছে ডাব, ঢেঁকি, তবলা, তরমুজ, তারা, থালা, দাঁড়িপাল্লা, দালান, দেয়ালঘড়ি, দোয়াত কলম, দোলনা, ধানের শীষ, নোঙর, নৌকা (স্থগিত), প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলকপি, ফুলের টব, ফুলের মালা, ফ্রিজ, বক, বাঘ, বই, বটগাছ, বাঁশি, বেঞ্চ, বেগুন, বাইসাইকেল, বালতি, বেলুন, বৈদ্যুতিক পাখা, মই, মগ, মাইক, মোটরগাড়ি (কার), মশাল, ময়ূর, মাছ, মাথাল, মিনার, মোমবাতি, মোবাইল ফোন, মোড়া, মোরগ, রকেট, রিকশা, লাউ, লিচু, লাঙল, শঙ্খ, সোনালি আঁশ, সেলাই মেশিন, সোফা, সিংহ, স্যুটকেস, হরিণ, হাত (পাঞ্জা), হাতঘড়ি, হাতপাখা, হাঁস, হাতি, হাতুড়ি, হারিকেন, হুক্কা ও হেলিকপ্টার।
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫২টি। আর আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রেখেছে কমিশন। এক্ষেত্রে নিবন্ধিত দলের বাইরের প্রতীকগুলো নতুন ও সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, এনসিপিসহ দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও ১৩টি দলের আবেদন পর্যালোচনায় রয়েছে।