Sunday 05 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড়ে অস্থিরতা ‘ভারতের সহযোগিতায়’: সন্তু লারমার পদত্যাগ দাবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:২৪ | আপডেট: ৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩৭

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ‘সিএইচটি সম্প্রীতি জোট’। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার পদত্যাগ দাবি করেছে ‘সিএইচটি সম্প্রীতি জোট’ নামে একটি সংগঠন। তাদের অভিযোগ— শেখ হাসিনার চেয়েও বড় ফ্যাসিস্ট সন্তু লারমা বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবির পাশাপাশি পাহাড়ে সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়েও বক্তব্য এসেছে। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের সমন্বয়ক থোয়াইচিং মং শাক।

তিনি বলেন, ‘খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত রাখার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। কখনো বাঙালি-অবাঙালির মধ্যে দাঙ্গা, কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, আবার কখনো আামাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনগণের ওপর বর্বরোচিত হামলা ঘটছে।’

বিজ্ঞাপন

ভারতের সহযোগিতায় ‘চাকমা জাতি পরিচালিত সংগঠন’ ইউপিডিএফ ও জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন থোয়াইচিং মং শাক। তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে দুঃখজনক হল— ভারতীয় সহযোগিতায় চাকমা জাতি পরিচালিত ইউপিডিএফ ও জেএসএস নামক সংগঠনসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তারা সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি, লোভ ও প্রলোভন দেখিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণে উৎসাহিত করছে।’

‘প্রতিবছর এসব সংগঠন কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে ব্যবসায়ী, ঠিকাদার—এমনকি সাধারণ কৃষক পর্যন্ত জিম্মি করেছে। সেই অর্থ দিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র আনা হয়। আবার অনেক নেতা পালিয়ে ভারতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে এবং সেখান থেকেই ‘জুম্মল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার নীলনকশা আঁকছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিনিয়ত পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এসব সংগঠন। ইউটিউব, ফেইসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে সেনাবাহিনী ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। তাদের মূল লক্ষ্য হল- বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা এবং সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।’

শান্তিচুক্তি পাহাড়ে অশান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মন্তব্য করে থোয়াইচিং মং শাক বলেন, ‘নামে শান্তি চুক্তি হলেও এই চুক্তির মূলে রয়েছে অশান্তি। এই চুক্তির ২৮ বছর চলছে, সামনের ডিসেম্বরে ২৯ বছর হবে। এই ২৯ বছরে সে (সন্তু লারমা) কী করেছে? সে যেটা করেছে তা হচ্ছে—গুম, খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি, রাহাজানি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সরল মানুষকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হবার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনেছেন এবং ভারতে সম্পদ গড়েছেন। এই ২৮ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার চেয়েও বড় ফ্যাসিস্ট হচ্ছে সন্তু লারমা। সেই সন্তু লারমা বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ উড়িয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে বেড়াবে, এই বিষয়ে বাংলাদেশের নাগরিকরা এখনো জানে না।’

পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার জন্য এনজিওদের কর্মকাণ্ডকেও দায়ী করে তিনি বলেন, ‘এই এনজিওদের ফান্ড আপনি বন্ধ করেন দেখবেন, আদিবাসী শব্দ কেউ উচ্চারণ করবে না। সমতলে অনেক সুশীল দেখবেন যারা আমাদের জোর করে আদিবাসী বানাতে চায়। যাতে করে সে লাগেজ ভর্তি টাকা নিয়ে বাসায় ফিরতে পারে। আপনি আমার জাতীয় পরিচয় বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করেন। কিন্তু আপনি সেই পশ্চিমের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য আদিবাসী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী সেনা ক্যাম্প বাড়ানো, বিদেশি অর্থায়ন ও প্রভাবিত সংগঠনগুলোর কার্যক্রম দৃঢ়ভাবে দমন করা, আদিবাসী-উপজাতি, জুম্ম-সেটেলার বাঙালি ইত্যাদি বিভাজনমূলক শব্দ বাতিল করে জাতীয় পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ করাসহ বেশকিছু দাবি তুলে ধরা হয়।

এতে সিএইচটি সম্প্রীত জোটের সদস্য আইনজীবী পারভেজ তালুকদার, সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক পাইশিখই মারমা, সমন্বয়ক রাকিব হোছাইন নওশাদ, ইখতিয়ার ইমন ও তন্ময় হোসেন নাসির উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

সংবাদ সম্মেলন সিএইচটি সম্প্রীতি জোট