ভারত: ভারতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব ব্যাখ্যা করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, ‘এটি একটি ‘বিচারিক আইনি প্রক্রিয়া’ এবং এর জন্য দুই সরকারের মধ্যে ‘সম্পর্ক এবং পরামর্শ’ প্রয়োজন। আমরা এই বিষয়গুলো পরীক্ষা করছি। আমরা এই বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ।’ ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব জানান, তিনি মনে করেন না এই মুহূর্তে এর বাইরে আরও কিছু বলা গঠনমূলক হবে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি দিল্লিতে এ কথা জানান। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সাউথ ব্লক হিসেবে পরিচিত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাব-এর একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এই মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল, যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ ও মায়ানমার) বি. শ্যাম, ডিক্যাব সভাপতি একেএম মঈনুদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তাদের এই ধারণা বাদ দেওয়া উচিত যে তাদের একজন পছন্দের লোক আছে অথবা তারা একদল লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে অথবা অন্য দলের লোকদের উপেক্ষা করছেন।’
তিনি জানান, তারা জনগণের রায়ের যত দ্রুত সম্ভব প্রকাশ চান, যার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
ভারত কি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনাকে পুনর্বহাল করার চেষ্টা করছে কিনা জানতে চাইলে, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তারা কেবল বাংলাদেশে আগাম নির্বাচনের পক্ষে, যাতে বাংলাদেশের জনগণ জনপ্রিয়ভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে তাদের রায় প্রকাশ করতে পারে।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি বলেছেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রত্যর্পণের অনুরোধের বিষয়ে বাংলাদেশ এখনো ভারতের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি। এ বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য নেই।’
তিনি সম্প্রতি ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতকে শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফিরিয়ে আনার জন্য অনুরোধ করেছে। ভারত থেকে এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।’
এর আগে, ছাত্র-সমর্থিত ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যান।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ নয়াদিল্লির কাছ থেকে সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘হাসিনার বিচার ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে এবং কেউ আসুক বা না আসুক, বিচার থামবে না।’
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে তবে সহায়তা চাইতে পারে। তবে, আমি এই মুহূর্তে কোনো প্রয়োজন দেখছি না।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রত্যার্পণের চেষ্টা চালিয়ে যাবে, যিনি বর্তমানে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ভারতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতে একটি কূটনৈতিক নোট (নোট ভার্বাল) পাঠিয়েছিল, যার সঙ্গে কিছু সহায়ক নথিও ছিল, যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হয়েছিল।
প্রায় এক ঘণ্টার আলাপচারিতার সময়, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব দ্বিপাক্ষিক বিষয়, সীমান্ত সমস্যা, পানি বণ্টন সমস্যা এবং ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দেন।
উল্লেখ্য, ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ডিক্যাব-এর ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে ভারত সফর করছে।