Tuesday 07 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজসিক হওয়ার বদলে ৬০ বছরে কেবল পিছিয়েছে রাজবাড়ী বিসিক

সুজন কুমার বিষ্ণু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৫৯

রাজবাড়ী বিসিকের বেহাল দশা। ছবি: সারাবাংলা

রাজবাড়ী: এলাকার নাম রামকান্তপুর। ১৯৬৪ সালে সেখানে ১৫ দশমিক ২৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠত হয় রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী। ৭৭টি প্লট নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই শিল্পনগরী বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই এখন বন্ধ। প্রথমদিকে ৫৩টি প্রতিষ্ঠান চালু হলেও ৬০ বছরের মাথায় উন্নয়নের বদলে বেহাল দশা। মনে হয়, কেবল কঙ্কাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই শিল্পনগরীটি। লোডশেডিং, খাবার পানি সংকট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজোসহ রয়েছে অনিরাপদ পরিবেশ। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি শিল্পনগরীর প্রতিষ্ঠানগুলো। লোকসানের মুখে প্রায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিসিক শিল্প নগরীতে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলেও কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা। সেখানে কাজ করছেন শ্রমিকরা। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ। বিভিন্ন জায়গায় ময়লা-আর্বজনা ও চারপাশ জঙ্গলে ভরা। অনেক প্লট পরিত্যক্ত, রাস্তার অবস্থা বেহাল। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় শিল্পনগরীর বেশিরভাগ এলাকায়। কোনোরকমে সচল রয়েছে সিলভার পণ্য তৈরির কারখানা, চাল ও স্বয়ংক্রিয় ময়দার মিল, তেলের মিল, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের আড়ংয়ের উৎপাদন কেন্দ্র, অরবিট অ্যাগ্রোসহ কয়েকটি ফ্যাক্টারি।

বিজ্ঞাপন

সিলভার পণ্য তৈরির কারখানার হারুন সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিসিক শিল্প এলাকায় লোডশেডিং হওয়ার কথা না। তবুও মাঝে মাঝে লোডশেডিং হয়। এতে অনেক ঝামেলাতে পড়তে হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে আমাদের মেশিন চলে না, কাজের অনেক ক্ষতি হয়।’ শহীদ নামের আরেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রতিনিয়ত এই এলাকায় ঘটছে চুরির ঘটনা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের তার, ফ্যাক্টরির মোটর চুরি হয় নিয়মিত। বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে বলার পর মিলছে না সমাধান।’

অরবিট অ্যাগ্রোর কয়েকজন কর্মচারী বলেন, বৃষ্টি হলে আমাদের গেটের পাশেই হাঁটু পানি জমে যায়। ড্রেনগুলো নোংরা, পরিষ্কার করা হয় না। বেশি বৃষ্টি হলে বাথরুমের ময়লা পানি (দুর্গন্ধ) আসে। পানি বের হতে না পেরে ফ্যাক্টারির ভেতরে চলে আসে। এখানে যাতায়াতের সমস্যা প্রকট। এছাড়া, খাবারের পানিতে অনেক সমস্যা রয়েছে। আয়রন তো আছেই, মাঝে মাঝে পানিও দুর্গন্ধ হয়।

সাগর অটো ফ্লাওয়ার ও সাগর অয়েল অয়েল মিলের সহকারী ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে প্রধান সমস্যা হলো ড্রেন ও ভাঙা রাস্তা। কারণ, একটু বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। পানি নিষ্কাশনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পানি জমলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসা-যাওয়া ও গাড়ি চলাচলে অনেক সমস্যা হয়। মিলের নিজস্ব খরচে বেশ কয়েকবার রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে।’ বিসিকের কর্মকর্তাদের একাধিকবার সমস্যার কথা বলা হলেও কিছুতেই সমাধান মিলছে না।

রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইমামুল করিম জকি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিসিকের ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে। জমি ট্যাক্সের টাকা কয়েকগুণ বেড়েছে। যে কারণে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এছাড়া, একটা ইন্ডাস্ট্রিজ করতে গেলে কমপক্ষে আট থেকে ১০টি লাইসেন্স নিতে হয়। আবার এই লাইসেন্স নিতে গিয়ে তাদের সন্তুষ্ট করতে না পারলে সেটাও পাওয়া যায় না। নতুন উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবে কীভাবে।’

রাজবাড়ী বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বেশ কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিসিক শিল্পনগরীতে যে রাস্তাটি রয়েছে সেটির অবস্থা খারাপ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, বাউন্ডারিসহ বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে হেড অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী অর্থবছরে কিছু বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে।’ বরাদ্দ পেলে সমস্যাগুলো ধাপে ধাপে কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে জানান শিল্পনগরীর সহকারী এই মহাব্যবস্থাপক।

সারাবাংলা/পিটিএম

৬০ বছর পিছিয়েছে বিসিক রাজবাড়ী রাজসিক

বিজ্ঞাপন

বিনা অভিজ্ঞতায় চাকরির সুযোগ
৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৫

আরো

সম্পর্কিত খবর