ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সিঁড়িগুলো নির্মাণ করেছি আবরার ফাহাদের মতো শহিদদের আত্মত্যাগের সিঁড়ির মাধ্যমে। আমরা আমাদের শ্রীনির্মাণ করেছি শাপলা চত্বরের শহিদ ৪২২ জন ছাত্র, যুবক ও বিএনপির নেতাকর্মীদের রক্তের সিঁড়ি মাড়িয়ে। সুতরাং ৭১ থেকে ২৪ নির্মোহভাবে আমাদের ইতিহাসকে রচনা করতে হবে, বিশ্লেষণ করতে হবে। তাহলে আমরা ভিনদেশি আধিপত্যবাদের বিশ্লেষণ করতে পারব।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বুয়েটে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অত্যাচারে মৃত্যুবরণ করা শিক্ষার্থী শহিদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘মত প্রকাশ থেকে মৃত্যু: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফ্যাসিবাদ বিস্তার ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এ সভার আয়োজন করে।
আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি আমার নির্বাসিত জীবনে আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি। চিন্তা করেছিলাম বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্ররা যারা বাংলাদেশের স্বার্থে কথা বলে তাদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু যারা কথা বলতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আশ্রয় নিয়েছে তারা জীবন দিয়ে দিলে এক আবরার থেকে লক্ষ আবরার জন্ম নেবে। চিন্তা করেছিলাম বাংলাদেশে হয়তো শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বললে জেলে যেতে হয়, কিন্তু ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে জীবন দিয়ে দিতে হয়।’
তিনি ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগান প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই ৩ টা শব্দের মাঝে সারা বাংলাদেশ নিহিত থাকবে। পররাষ্ট্র নীতিসহ যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে আমরা এই নীতি মেনে চলব। আসুন আমরা বাহুর চাইতে মেধাকে গুরুত্ব দেই। কেউ যদি বাহুবলে কথা বলে তার হাসিনার মতই পরিণতি হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাড পলিটিক্সকে গুড পলিটিক্স দিয়ে উৎখাত করতে চাই। তাহলে আমরা ফ্যাসিবাদ রুখে দিতে পারব, ব্যাড কালচারকে গুড কালচার দিয়ে উৎখাত করতে হবে।‘
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘আবরার ফাহাদকে যেদিন পিটিয়ে হত্যা করা হয় সেদিন রাতে আমরা কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রদলের নেতারা বুয়েটের আশেপাশে থেকেছিলাম। সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও প্রকাশিত হলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রদলের নেতারাও ভীত হয়েছিল এই ভেবে যে একজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করতে পারে সেটি আমাদের অকল্পনীয় ছিল। তারপরদিন মুষলধারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল ছাত্রদল। সেদিন আমাদের ওপর হামলা হতে পারত। সেদিন আমাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল না। তবুও সারাদেশেই ছাত্রদলের নেতারা মিছিল করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যারা ৭ অক্টোবর এর আগে ছাত্রলীগের পতাকা তলে ছিল, আবরার ফাহাদ হত্যার ৫ দিন আগেও যারা ছাত্রলীগের মিছিলে নেতৃত্বে ছিল, ছাত্রলীগের পদপ্রার্থী ছিল তারা আজকে নীতি নির্ধারক হয়ে অবতীর্ণ হতে চায়, তারা ছাত্র রাজনীতির গল্প শোনায়।‘
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আবরার ফাইয়াজের বক্তব্যে দেখি, হত্যার সঙ্গে যুক্ত মুনতাসির আল জেমি নামের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ৬ আগস্ট পালিয়ে গেলে এখনো তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। আমরা আবরার ফাহাদের পরিবারের সঙ্গে এ বিষয়ে উদ্যোগ জানিয়েছে। তাদেরকে বাঁচানোর জন্য শিবিরের সাবেক সভাপতি শিশির মনির সরাসরি ভূমিকা পালন করছে এবং এখনো তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। যারা বিগত ৫ আগস্টের পর নতুন ইতিহাস তৈরি করতে চায় তাদেরকে বলতে চাই, যতদিন আমরা আবরারের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করব ততদিন আমরা শিক্ষার্থীদেরকে তাদের গুপ্ত রাজনীতি স্মরণ করিয়ে দেব।’