মধ্যপ্রাচ্যের গাজা, লেবানন, ইয়েমেন ও ইরানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ২১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ ও সামরিক সহায়তা দিয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্টের দুটি নতুন প্রতিবেদন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র, গোলাবারুদ, অর্থ ও রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়া ইসরায়েল গাজার ওপর চলমান হামলা বা ইরান ও ইয়েমেনে আক্রমণ চালিয়ে যেতে পারত না।
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় ও কুইন্সি ইনস্টিটিউটের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইসরায়েল এই মাত্রার ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারত না।’
গবেষক উইলিয়াম ডি. হার্টাংয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ইসরায়েলকে দেওয়া সামরিক সাহায্য ও যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সামরিক ব্যয় মিলে মোট ব্যয় ৩১ থেকে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে।
গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছে। ইরান ও ইয়েমেনে ইসরায়েলি হামলায়ও শত শত মানুষ নিহত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের সক্ষমতা সীমিত, তাই বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র ও আধুনিক অস্ত্রের যোগান সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অর্থদাতা মিত্র। দেশটি প্রতিবছর প্রায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা পায়, যা ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ১৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় প্রশাসনই ইসরায়েলের সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রয় চুক্তি করেছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নাগরিক ইসরায়েলের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ মার্কিন ইহুদি মনে করেন, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে এবং ৬০ শতাংশের বেশি মনে করেন এটি যুদ্ধাপরাধ।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাট ডাস বলেন, ‘আমেরিকান নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় সীমিত, অথচ ইসরায়েলের যুদ্ধের জন্য সবসময় বিলিয়ন ডলার পাওয়া যায় এটি রাজনৈতিক দুর্নীতির প্রতিফলন। যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা না থাকলে ইসরায়েল গাজা, লেবানন, ইরান ও ইয়েমেনে এত দীর্ঘ ও ব্যাপক যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারত না।’