Wednesday 08 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যমুনার পাড়ে অপরূপ কাঁশবন, দর্শনার্থীর ভিড়

রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:০২ | আপডেট: ৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৫৮

কাঁশফুলের নরম ছোঁয়ায় প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। ছবি: সারাবাংলা

সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর পাড়ে (ক্রসবার-৩)-এ একধারে কাঁশবন ফুলে ফুলে সাদা। মাথার ওপরে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। বাতাসে দুলছে সাদা কাঁশফুল। একইসঙ্গে নদীতে জেগে ওঠা চরের যেদিকেই চোখ যায়, শুধু শুভ্র রঙের মেলা। সাদা কাঁশফুলের ছোঁয়ায় আকৃষ্ট হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। প্রকৃতির কল্যানে জন্ম নেওয়া কাঁশবনের কারণেই এমন সৌন্দর্য। দোল খাওয়া কাঁশফুলের সঙ্গে নিজেকে ক্যামেরাবন্দী করতে ভিড় করছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।

মনোমুগ্ধকর অপরূপ এই দৃশ্য দেখা যাবে, সিরাজগঞ্জ শহরের চর-মালশাপাড়ায় যমুনা নদীর দক্ষিণ পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত পৌনে দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ক্রসবার-৩ বাঁধে। সকলের মুখে ‘চায়না বাঁধ-৩’0 নামে পরিচিত ওই স্থান। এখানে কাঁশফুলের সৌন্দর্যের টানে প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় জমে। এ কাঁশফুল সবাইকে মুগ্ধ করে। শহর থেকে চায়না বাঁধে পাড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছানো বেশ সহজ।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৮ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার বালুর চরজুড়ে কাঁশফুল ফুটেছে। লম্বা-চিরল সবুজ পাতার বুক থেকে বেরিয়ে আসা কাঁশফুল কোথাও থোকা থোকা, কোথাও গুচ্ছ, বাতাসে দুলছে। দূর থেকে মনে হবে সাদা চাদর বিছানো। ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, প্রাইভেকার, মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সের মানুষ এই কাঁশবনে ছুটে আসছে। কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। কেউবা আবার দু-চারটি কাঁশফুল ছিঁড়ে তোড়া তৈরি করছেন। শিশুরা কাঁশবনে ছোটাছুটি আর খেলাধুলা করছে। কাঁশফুলের নরম ছোঁয়ায় প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে মুক্ত আনন্দ পেতে প্রতিনিয়ত মানুষ ছুটে আসছে এ কাঁশবনে। বিশেষ করে শেষ বিকেলে কাঁশবনের সৌন্দর্য আরো অনেকগুণ বেড়ে যায়। এ কারণে বেশিরভাগ দর্শনার্থীরা বিকেলেই বেশি আসছেন। কাঁশফুল ও নদীর পানি দেখতে অনেক ভালো লাগছে দর্শনার্থীদের।

মেয়েকে নিয়ে শাহজাদপুর থেকে কাশবনে বেড়াতে এসেছেন স্বপ্না পারভিন। তিনি বলেন, ‘যমুনা নদীর পাড়ে যতো দূর চোখ যায় শুধু সাদা আর সাদা। একসঙ্গে এতো কাঁশফুল দেখতে বেশ ভালো লাগে। এখানে এলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। বাসার ভেতরে মেয়ে থাকতে চায় না। একারণে মা ও মেয়ে কাঁশবনে বেড়াতে এসেছি। সেইসঙ্গে ছবিও তোলা হলো। এসে দারুণ সময় কাটলো।’

স্থানীয় শামিমা খাতুন, আলপনা, মজিবর রহমান ও শফিকুল ইসলাম বলেন, কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ এখানে আসেন। এদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। তবে এ ফুল বেশিদিন থাকে না। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই ফুল বাতাসে উড়ে যায়। অর্থাৎ, কয়েক দিন পরই এ ফুল আর দেখা যাবে না।

ঘুরতে আসা নাজিফা খাতুন বলেন, চায়না বাঁধ এলাকায় বিকেল হলেই কাঁশফুলের সৌন্দর্যের টানে বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসা প্রকৃতিপ্রেমী তরুণ-তরুনীদের ভিড় জমে। তারা ছবি তোলে, ভিডিও করে। এ এক অন্য রকম দৃশ্য।

ক্রসবার-৩ এলাকার ফুসকা বিক্রেতা শফিক বলেন, কাঁশফুল ফোটায় পুরো এলাকা সাদা হয়ে যায়। কার্তিক মাস পর্যন্ত কাঁশফুল থাকে।

বাদাম ও পানি বিক্রেতা আলতাব শেখ বলেন, ‘যমুনা নদীর চরেই খেলাধুলা করে আমার বেড়ে ওঠা। কয়েক বছর ধরে এখানে ফুল ফুটছে। বিকেল হলেই প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসে। ছবি তোলে, ভিডিও করে। অনেকেই ছবি ও ভিডিও করে ফেবসুকে ছেড়ে দেয়। এতে অনেক মানুষজন এখানে আসে। আমাদের কেনা বেচা ভালোই হয়।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেছুর রহমান বলেন, নদীর পাড়ে সাদা কাঁশবন দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক দর্শনার্থী আসেন। বিকেল হলেই প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসে। ছবি তোলে, ভিডিও করে। ছুটির দিনে ভিড় বেড়ে যায়। তাদের নিরাপত্তায় প্রশাসন সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আ.জা.মু. আহসান শহীদ সরকার বলেন, কাঁশফুল ও যমুনা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীরা এখানে আসে। তাদের নিরাপত্তায় প্রশাসন কাজ করেন। এ কারণে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনাথীরা নির্বিঘ্নে সৌন্দর্য উপভোগ করে নিরাপদে নিজ বাড়ি ফিরে যান।

সারাবাংলা/জিজি

অপরূপ কাঁশবন দর্শনার্থীর ভিড়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর