Wednesday 08 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বিএনপির ছত্রছায়ায়’ আ.লীগপন্থী ৩ ব্যবসায়ী
খাস জমি ও রেলের জায়গা দখল করে বানাচ্ছেন মার্কেট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৫০ | আপডেট: ৮ অক্টোবর ২০২৫ ২১:৫৯

দক্ষিণ খিলগাঁও পূবালী মার্কেটের চলাচলের রাস্তায় (লালবৃত্ত চিহ্নিত) হচ্ছে অবৈধ নতুন ভবন। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: দক্ষিণ খিলগাঁও পূবালী মার্কেট। মূল মার্কেটটি ৩০ দশমিক ২২ শতাংশ জমিতে। দলিল খতিয়ানে ৩৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি ছিল। তবে আরএস-এ ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ জমি সরকারি খাস খতিয়ানে চলে যায়। পাশেই রেলের জায়গা। এখন ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং রেলের কিছু জমি দখল করে নতুন করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। আর নতুন এই ভবন নির্মাণ করছেন মার্কেটটির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়া, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান মুন্সি ও পরিচালক আতাউর রহমান।

জানা গেছে, আগে ছিলেন তারা আওয়ামী লীগ, বর্তমান সেজেছেন বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী। অভিযোগ রয়েছে, এই তিন ব্যবসায়ী আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকলেও বর্তমানে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে চলছেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলছেন, ফুল দিচ্ছেন; এমনকি নেতাদের অর্থ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নেতারাও মোটা অংকের টাকা পেয়ে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, আতাউর রহমান ও কুদ্দুস মিয়া ৫ আগস্টের পর জেলে যায়। এর পর জামিনে বেরিয়ে তারা বিএনপির এক শ্রেণির নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলছেন। তবে অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা মার্কেট হওয়ার পর দোকানের পজিশন কিনে একেকজন মালিক হয়েছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এটা জানার পরও ২০২৩ সালে নির্মাণের অনুমতি নেই জানিয়ে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন তৎকালীন মেয়র ফজলে নূর তাপস। তখন মার্কেটটি ভেঙে ফেলা হয়। ওই সময় আওয়ামীপন্থী ওই তিন ব্যবসায়ী সেখানে ১০ তলা মার্কেট হবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এতে সবাই নাকি লাভবান হবে। এমনকি তাপসও নিজের লাভের জন্য অবৈধভাবে মার্কেট ভাঙার অনুমতি দিয়েছিলেন।

অথচ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মার্কেটের বাইরের চলাচলের রাস্তা (সরকারি খাস জমি) দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন তারা। শুধু খাস জায়গা নয়, পাশের রেলের জায়গাও ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করছেন। ফলে একদিকে যেমন সরকারি জায়গা বেহাত হচ্ছে, অন্যদিকে মার্কেটের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এতে চলাচলের রাস্তা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত তিন ব্যক্তি সমিতির নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করছেন। এখান থেকে মোটা অংকের টাকা দুর্নীতি করার সুযোগ নিয়েছেন তারা। তারা মার্কেটের স্বার্থ না দেখে নিজেদের পকেটে টাকা ঢুকানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মার্কেটের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আতাউর, খলিলুর রহমান ও আব্দুল কুদ্দুস মিয়া মিলে এই অবৈধ মার্কেট নির্মাণ করছেন। তাদের না আছে জায়গার দলিল, না আছে রাজউকের অনুমতি, না আছে সমিতির অনুমতি। এমনকি নেই ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি। সবকিছুই করছে গায়ের জোরে। জবর দখল করে মার্কেট নির্মাণ করছেন তারা।’

আরেক ব্যবসায়ী সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মূল মার্কেটটি ৩০ দশমিক ২২ শতাংশ জমিতে নির্মিত। এই দলিলের খতিয়ানে ৩৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে। তবে আরএস-এ এসে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ জমি সরকারি খাস খতিয়ানে চলে যায়। পাশেই রেলের জায়গা রয়েছে। এখন ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং রেলের কিছু জমি দখল করে নতুন করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন করে এই মার্কেট নির্মাণে সমিতির কোনো লাভ নেই, বরং ক্ষতি হবে। এর পরেও তারা মার্কেট নির্মাণ করছে।’

অন্য এক ব্যবসায়ী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন করে নিচে মোট ২৪টি দোকান তৈরি। বিক্রির জন্য একেকটি দোকান বাবদ ৩০ লাখ করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এতে মোট ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা তারা পকেটে নিতে পারবে। অন্যদিকে যারা দোকান কিনবেন, তাদের ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। কারণ, এক সময় সরকারি খাস জমি উদ্ধার ও রেলের জায়গা উদ্ধার করলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।’

মার্কেটের সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবি, অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ বন্ধ হোক। যে মার্কেট আছে তার জন্য সামনে খোলামেলা জায়গা থাকা জরুরি। এটি ক্রেতা সাধারণের বের হওয়ার জায়গা। এটি বন্ধ হলে শুধু একমুখী রাস্তা খোলা থাকবে। মার্কেটে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই বিপদে পড়তে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ খিলগাঁও পূবালী মার্কেটের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সারাবাংলাকে বলেন, ‘সব নিয়ম-কানুন মেনেই আমরা মার্কেট নির্মাণ করছি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বুঝি না। যখন যে দল থাকে তখন সবার সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলতে হয়। কারণ, আমরা ব্যবসায়ী।’

তবে মার্কেটের সেক্রেটারি খলিলুর রহমানকে ফোনে পাওয়া যায়নি। আর মার্কেট পরিচালনা কমিটির সদস্য আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মার্কেট নির্মাণের বিষয়টি সকলেই অবগত রয়েছেন। এসিল্যান্ড এসে দেখে গেছেন। আমরা নিয়ম মেনেই সব করছি। খাস জায়গা দখলে নিলে সরকার আসুক, অভিযোগ করে জায়গা ফেরত নেবে। এতে অন্য কারও সমস্যা তো হওয়ার কথা না।’

এ বিষয়ে জানতে রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড, রমনা) আব্দুল্লাহ আল মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জায়গা দখলের অভিযোগ পেয়ে দুই দফায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন নতুন করে কাজ করছে কি না তা জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব। সরকারি খাস জায়গায় ভবন করার কোনো সুযোগ নেই।’

অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খাস জমি উদ্ধারে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসি ল্যান্ড বলেন, ‘এরকম কোনো কিছু ঘটেনি। যারা বলেছেন, তারা মিথ্যা বলেছেন।’

অপরদিকে রেলের জায়গা দখলের বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

আ.লীগপন্থী ৩ ব্যবসায়ী নির্মাণ বিএনপির ছত্রছায়ায়’ মার্কেট