ঢাকা: বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সম্পূর্ণভাবেই অভ্যন্তরীণ বিষয় দাবি করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সাম্প্রতিক মন্তব্য ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক’।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তৌহিদ হোসেন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ওই বক্তব্যকে তাদের বিষয় বলে মনে করি না; এটি বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়, আর এ ধরনের মন্তব্য একেবারেই অযৌক্তিক।’
এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সম্প্রতি বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও অংশগ্রহণমূলক হলে ভারত বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে।’
ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতির চিঠি, তুরস্কের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা এবং বিদেশে ভিসা-সংক্রান্ত নানা জটিলতাসহ সমসাময়িক বেশ কিছু ইস্যু নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
রাষ্ট্রপতির পাঠানো বলে উল্লিখিত একটি চিঠি সম্পর্কে জানতে চাইলে তৌহিদ বলেন, ‘তিনি চিঠিটি পেয়েছেন, তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না।’
তৌহিদ বলেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রপতি) শুধু তার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন; এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।’ তিনি জানান, চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার অনেক পরে তার হাতে পৌঁছায়।
বিদেশি মিশনগুলো থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি অপসারণের বিষয়ে কোনো আইন বা সরকারি নির্দেশনা জারি হয়েছে- এমন দাবিও তিনি অস্বীকার করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সাবেক মন্ত্রীর বাসায় তিন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৌহিদ বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির বাসায় যাওয়া অপরাধ নয়। কূটনীতিকরা সাধারণভাবে যে কারও বাসায় যেতে পারেন। তবে সে সাক্ষাতের আলোচ্যবিষয় ও সম্ভাব্য ফলাফল স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।’
তুরস্কের সঙ্গে সম্ভাব্য সামরিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে তৌহিদ বলেন, ‘এটি দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগের অংশ। তুরস্কের উল্লেখযোগ্য সামরিক প্রযুক্তি আছে। আমাদের ইতোমধ্যে অনেক দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা রয়েছে এবং তা আরও সম্প্রসারিত করা উচিত। এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি বিষয়।’
পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, ‘এ ধরনের দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটনা হতে পারে। বাংলাদেশ কোনো সংঘাতে অংশ নিচ্ছে না, এবং আমরা কোনোভাবেই চাই না আমাদের নাগরিকেরা বিদেশি কোনো অভিযানে জড়াক।’
ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতা বিষয়ে তৌহিদ জানান, কিছু দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের জন্য ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাভিসার চাহিদা অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছে, কিন্তু তারা বছরে মাত্র দুই হাজার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে।’
তৌহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ জার্মান সরকারের কাছে শিক্ষার্থী কোটার সংখ্যা অন্তত ৯ হাজারে উন্নীত করার অনুরোধ জানিয়েছে, যা বর্তমানে পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত কোটার সমান। তিনি বলেন, ‘সরকার বিকল্প দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সহজতর করার উপায় খুঁজছে, যাতে জট ও সেবা-সংকট নিরসন করা যায়।’
তবে উপদেষ্টা স্বীকার করে বলেন, ‘জাল নথি ও অনিয়মিত অভিবাসনের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি প্রকৃত আবেদনকারীরাও এখন সমস্যায় পড়ছেন। আমাদের প্রথমেই নিজেদের ভেতরের ত্রুটি ঠিক করতে হবে।’