ঢাকা: আগাম কোনো খবর না জানিয়ে দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার স্বামী শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেছেন। সাধারণত খালেদা জিয়া বাসার বাইরে বের হলে আগে সাংবাদিকদের জানানো হয়। তিনি হাসপাতালে চেকআপে গেলেও আগে জানানো হয়। এমনকি ডিএমপির কমিশনারকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করেন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার। কিন্তু বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে আগে থেকে তার সমাধিতে যাওয়ার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া শহিদ জিয়ার সমাধির উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন বুধবার রাত ১১টার কিছু আগে। রাত ১০টা ৪২ মিনিটে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বিএনপি বিট হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি মেসেজ দিয়ে বিষয়টি জানান। একইসঙ্গে তিনি ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ ওই গ্রুপে শেয়ার করেন। সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকরা সবাই নড়ে চড়ে বসেন। বিশেষ করে বিএনপি বিটের টেলিভিশন রিপোর্টাররা অস্থির হয়ে পড়েন ফুটেজ পাওয়ার জন্য। এরইমধ্যে খালেদা জিয়া শেরে বাংলা নগরে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পৌঁছে যান।
জিয়ার সমাধির সামনের লেকের ওপরের সেতু দিয়ে তার গাড়িটি একদম জিয়াউর রহমানের কবরের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ১১টা ১১ মিনিটে মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যে ছবি দেন তাতে দেখা যায় খালেদা জিয়াকে বহন করা নীল রঙের ছোট প্রাইভেট কারটি সমাধির ভেতরে প্রবেশ করেছে। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা ছবি তুলছেন। ছবিতে দেখা যায় গাড়িতে বসে খালেদা জিয়া দু’হাত তুলে মোনজাত করছেন। এরপর আরও বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়।
পরে বিএনপির মিডিয়া সেলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ১০ সেকেন্ড ও ৩২ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও পাওয়া যায়। ওই ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার গাড়িটি জিয়াউর রহমানের সমাধির কাছে রাখা হয়। তিনি গাড়িতে বসে মোনাজাত করছেন। গাড়িতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন, তার ভাই প্রয়াত সাঈদ ইস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন আহমেদ ও ভাই শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা।
গাড়ির পাশে দাড়িয়ে মোনাজাত করতে দেখা যায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাইফ আলী খান, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক ডা. এ এফ এম সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. জাফর আহমেদ, চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা সমন্বয়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত ড. শামসুল ইসলাম, বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারসহ ৪০ থেকে ৫০ জন নেতাকর্মী ও চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) হঠাৎ করে রাতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন উনার স্বামী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। তখন একরকম দ্রুততার সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সাঈফ আলী খান সারাবাংলাকে বলেন, আমি ওই সময় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ছিলাম। হঠাৎ শুনলাম ম্যাডাম বাইরে যাবেন। ধারণা করেছিলাম হাসপাতালে যাবেন। তাই তার গাড়ি বহরে যুক্ত হই। পরে দেখি গাড়ি শহিদ জিয়ার সমাধির দিকে যাচ্ছে। আমিও সেদিকে যাই এবং ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দোয়ায় অংশ নিই।
চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা সামসুদ্দিন দিদার সারাবাংলাকে বলেন, আমি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ছিলাম। হঠাৎ শুনলাম ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) হাসপাতালে যাবেন। তাই সঙ্গে সঙ্গে ম্যাডামের বাসার সামনে যাই। এর কিছুক্ষণ পর জানতে পারি ম্যাডাম শহিদ জিয়ার সমাধিতে যাবেন। আমিও তার গাড়ি বহরে যোগ দিয়ে সেখানে গিয়ে দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেই।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, রাতে হঠাৎ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার স্বামী শহিদ জিয়াউর রহমানের সমাধিতে দোয়া করতে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করেন। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তারেক রহমান তাকে বলেন, চেয়ারপারসন যেহেতু সমাধিতে যেতে চাচ্ছেন অবশ্যই যাবেন। আপনারা ব্যবস্থা করেন।
অন্য একটি সূত্র জানায়, ডা. জাহিদ সবাইকে বলেছেন বিষয়টি আগে থেকে মিডিয়াকে জানানো যাবে না। সেজন্য মিডিয়া সেল থেকে কেউ সাংবাদিকদের জানায়নি। শেষ মুহূর্তে যখন ম্যাডাম বাসা থেকে বের হয়ে অনেক দূর চলে গেছেন তখন মিডিয়া সেলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানান শায়রুল কবির খান।
শায়রুল কবির খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যাডাম নির্বাচনি প্রচারে যাওয়ার আগে মাজারে দোয়া করতে গেছেন কি না এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ আদালত থেকে রায় ঘোষণার পর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। এর কিছুদিন আগে সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপারসন নেতাকর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পস্তবক অর্পন করেন।