ঢাকা: জুলাই সনদে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে তার সঙ্গে পিআর পদ্ধতি যুক্ত করে গণভোটে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, জনগণ যদি পিআর-এর পক্ষে মত দেয় তাহলে সকল দলকে সেটা মানতে হবে। যদি অধিকাংশ মানুষ পিআর না মানে আমরাও তা মেনে নেব। কিন্তু জাতির মতামত না নিয়ে পিআরকে উপেক্ষা করা যাবে না।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বাদজুম্মা ৫ দফা দাবিতে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তার আগে বড় অপরাধীদের বিচার দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা দাবি করবো ফ্যাসিস্টের দোসর মেনন-ইনুরা ১৭ বছর শেখ হাসিনাকে পাহাড়া দিয়ে রেখেছিল। তারা পাহাড়া না দিলে (হাসিনা) এতদিন টিকতে পারতো না। সাজানো বানানো নির্বাচন করতে পারতো না। একই অপরাধে অপরাধী হওয়ার কারণে তাদেরও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
ট্রাইব্যুনালের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন যদি ফেব্রুয়ারিত হয় অন্তত বড় বড় অপরাধীদের বিচার যেন নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান হয়। তা না হলে কারও হস্তক্ষেপে যদি এইসব খুনিরা বেঁচে যায় নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। আধিপত্যবাদীদের সেবাদাস হয়ে হয়তো আমাদের বসবাস করতে হতে পারে। সেই কারণে আমরা লেভেল প্লেইং ফিল্ড, পিআর পদ্ধতি, অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের কাছে বলবো জুলাই সনদ স্বাক্ষরের সময়ের আগে আপনারা পিআর পদ্ধতির বিষয়ে একমত হয়ে জাতির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করুন।
সকল রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, বক্তৃতার সময় শুধু বলবেন ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আর যখন দেশের স্বার্থে কোনো ছাড়, কোনো ত্যাগ, কোনো বিষয়ে ঐকমত্যের প্রশ্ন আসে তখন নিজেদের স্বার্থ বড় করে দেখলে কথার ও কাজের কোনো মিল হয় না। এই জাতি ৭১-এ রক্ত দিয়েছে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রক্ত ঝড়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে রক্ত দিয়েছে। আমরা বার বার রক্ত দিতে চাই না। আমাদের তরুণ সমাজের প্রায় ১৪০০ জন জীবন দিয়েছে। ৩০ হাজার আহত হয়েছে। তারা আমাদেরকে ঋণে আবদ্ধ করেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে একটি মানবিক বাংলাদেশ তৈরি করে তাদের স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় স্বার্থে যেন আমরা ঐক্য প্রচেষ্টায় বিঘ্ন না ঘটাই। সকল দলের প্রতি সে আহ্বান থাকবে।
নির্বাচনের আগে কোথাও লেভেল প্লেইং ফিল্ড মানা হচ্ছে না দাবি করে জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, থানার ওসি সাহেব, ডিসি সাহেব ইউএনও সাহেব, সচিবালয়ের কর্মকর্তা এবং আমলারা ইভেন আমাদের অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টাদের ভূমিকা এখনো জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। কোনো বিশেষ দলের প্রতি দুর্বল হয়ে, কারও চাপে মাথা নত করে প্রশাসনে কোনো দলের পছন্দের লোককে বেছে বেছে পদায়ন করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। এগুলো বন্ধ করে নির্বাচনের মাঠকে সমান সমতল করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখে আমরা বলতে চাই একদিকে আপনি সরকার প্রধান অন্যদিকে আপনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনেরও প্রধান। দুটি প্রধান দায়িত্ব নিয়ে আপনি শক্ত থাকবেন। আপনার চারদিকে যে সমস্ত উপদেষ্টাগণ আছে মাঝে মাঝে আপনাকে অন্যদিকে ঠেলে দিয়ে একটি বিশেষ দলের প্রতি আনুগত্যের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এই দৃশ্য আর দেখতে চাই না।
ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মহানগর দক্ষিণ জাাময়াতের সদস্য সচিব ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব ড. রেজাউল করিম।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল পুরনো পল্টন মোড়, বিজয়নগর, কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগর গিয়ে শেষ হয়।