পটুয়াখালী: গলাচিপায় কৃষকদের প্রায় ২০০ একর জমি চাষাবাদ বন্ধ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। ওই জমিতে চাষাবাদ করতে প্রশাসনের ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন কৃষকরা। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ সহযোগিতা চান চরবাংলা বিত্তহীন কৃষক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে চরবাংলা বিত্তহীন কৃষক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সেরাজ খান বলেন, ‘‘আমাদের কোনো পৈত্রিক জমি নাই। আমরা দীর্ঘ-৩০/৩৫ বছর যাবৎ গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চরবাংলার কৃষি খাস জমি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছি। প্রতিবছর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে আমরা চাষের অনুমতি নিয়ে এসব সরকারি খাস জমি চাষাবাদ করে আসছি। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে গলাচিপা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আমাদের সমিতির ভূমিহীন সদস্যদের নামে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ডিসিআর প্রধান করেন। পরে প্রতি বছরের মতো ওই জমি চাষাবাদ করতে গেলে স্থানীয় চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. বাকের বিস্বাস, ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মতিন হাওলাদার এবং চর বাংলা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. আনোয়ার হাওলাদারসহ ১৪/১৫ জন বিএনপির নেতাকর্মী উক্ত জমি চাষে বাধা প্রধান করে। তারা বলেন-‘সরকারি খাস জমি ৫ আগস্টের পরে তারা ভোগ দখল করবে, তোমরা কেন ডিসিআর নিয়েছো।’
পরে আমরা উপায় অন্ত না পেয়ে গলাচিপা থানার অভিযোগ দায়ের করিলে থানার এএসআই মো. জাকির হোসেন সরেজমিনে ঘটনা তদন্ত করে উক্ত বিবাদীদের বিরুদ্ধে ১০৭/১১৭ ধারায় গলাচিপা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। নির্বাহী কোর্ট আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি কারেন। আসামিরা চলতি বছরের ৬ অক্টোবর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মুচলেকা দিয়েছেন এবং ১৫ জন আসামি ২ হাজার টাকা বন্ডে এ্যাডভোকেট মো. মনিরুল ইসলামের জিম্মায় জামিন নিয়েছেন।
তারা সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং ইউনিয়ন বিএনপির বিএনপির সভাপতি বাকের বিশ্বাস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মতিন হাওলাদারের লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে পরিচিত। তারা আমাদেরকে এলাকাছাড়া করার জন্য মারধর, বিভিন্নভাবে হয়রানিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তাদের লাঠিয়ালবাহিনীর আতঙ্কে আমরা বর্তমানে চরবাংলায় যেতে পারছিনা। আমরা কৃষক মানুষ, এলাকা ছেড়ে আমরা কোথায় যাবো। আমরা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সাহায্য চাই।’
চরবাংলা বিত্তহীন কৃষক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মজিবর হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের সমিতির প্রায় ৭ সদস্য রয়েছে। এরমধ্যে থেকে ১৫৫ জন্য ভূমিহীন সদস্যকে হাইকোর্টের নির্দেশে ডিসিআর দিয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস। এসব জমি আমরা আগেও চাষাবাদ করতাম। বর্তমানে বিএনপির লোকজন এসব জমি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করতেছে, আমাদেরকে চাষাবাদ করতে বাধা দিচ্ছে। তারা বিভিন্নভাবে হয়রানিসহ হুমকি দিচ্ছে।‘
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. বাকের বিস্বাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চরবাংলায় একটা সমিতি আছে। ওই সমিতি দিয়ে আওয়ামী লীগের কিছু লোক ১৬ বছর ভাইঙ্গা-চুরিয়া খাইছে। ৫ তারিখের পরে কিছু লোক আমার সহযোগিতা চাইছে। আমি এসিল্যান্ডকে প্রকৃত ভূমিহীনদের জমি দিতে বলছিলাম। পরে ওই জমির মধ্যে থেকে বৈশাখ মাসে ১২ জনকে এক বছরের জন্য প্রত্যায়ন দিয়েছেন গলাচিপার সাবেক এসিল্যান্ড। প্রত্যায়নের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে ওই সমিতি (চরবাংলা বিত্তহীন কৃষক সমবায় সমিতি লিঃ) হাইকোর্ট প্রত্যায়ন বাতিল করে সমিতিকে ডিসিআর দিতে বলে। যারা প্রত্যায়ন নিয়েছিলো তারা আবার রায় ভ্যাকেট করছে শুনছি। চরবাংলায় আমার কোনো জমি নাই, আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না।’
গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছি। এতে বিএনপির কেউ অনিয়ম করে থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুর রহমান বলেন, যেহেতু কার্ডের জমি নিয়ে সমস্যা, এটা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিষয়। তবে এ বিষয়ে থানায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।