ঢাকা: জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করেই আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঘোষিত জুলাই সনদের অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে দেশব্যাপী ঘোষিত ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সমাবেশ ও পরবর্তীতে বিশাল গণমিছিল আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক আরও বলেন, ‘‘বাহাত্তরের সংবিধানের ভিত্তিতে বাংলাদেশে এক নতুন চেতনা গজিয়ে ওঠে। দুঃখজনক হলো—গত ৫৩ বছর ধরে একাত্তরের চেতনার নামে বাহাত্তরের ভেজাল চেতনা সরবরাহ করা হয়েছে। সেই বাহাত্তরের চেতনার বিরুদ্ধে যারা যখনই দাঁড়িয়েছে, তাদেরকেই ‘রাজাকার’ ট্যাগ দেওয়া হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘সেই দেশবিরোধী খেলা খেলতে খেলতে খলনায়িকা শেখ হাসিনা যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চার কোটি মহানায়ককে রাজাকার বলে গালি দিয়েছিল, তখনই মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়—দিল্লির এই সেবাদাসী আর দেশের মসনদে থাকতে পারবে না।’
সরকারের উদ্দেশ্যে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘দেশের মানুষ জানতে চায়—দেশ এখন বাহাত্তরের ধারায় চলবে, নাকি বৈষম্যবিরোধী চেতনার ধারায় পরিচালিত হবে?’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের গণমিছিল। ছবি: সারাবাংলা
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সকল রাজনৈতিক পক্ষকে বলবো— যার যার অবস্থান পরিষ্কার করুক। যারা চব্বিশের বিপক্ষে অবস্থান নেবে, তারাই বাহাত্তরের বাকশালপন্থী। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করছি— আমরা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।’
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাংলাদেশের বাঁচা-মরার প্রশ্ন উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে সন্তানদের রক্তের ওপর ক্ষমতার মসনদে বসে আজও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে পারেননি— লজ্জা হওয়া উচিত আপনাদের।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার তোড়জোড় করছেন, আসন বিন্যস্ত করছেন, কিন্তু শহিদদের রক্তের সম্মান জানানোর রাষ্ট্রীয় নিদর্শন জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এখনো করতে পারেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই— জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে হবে। এর বিকল্প কোনো চিন্তার সুযোগ বাংলাদেশের মাটিতে নেই।‘
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনীর সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুরশিদ সিদ্দিকী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নিয়ামতুল্লাহ আমীনের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী, মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ হাদী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসাইন রাজি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাকিবুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল্লাহ আশরাফ ও বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল আজিজ প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল গণমিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে পল্টন মোড়, প্রেস ক্লাব হয়ে বিজয়নগর গিয়ে শেষ হয়।