ক্যারিবীয় দেশ হাইতিতে গ্যাং সহিংসতা ও অর্থনৈতিক পতনের কারণে দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বর্তমানে তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছে। সর্বশেষ এক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন হাইতিয়ান যা দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি, এখন চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) প্রকাশিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গ্যাংদের দখল, সহিংসতা, কৃষি উৎপাদন ধ্বংস ও ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষ জরুরি পর্যায়ের ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে, আর ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাইতির সরকার শুক্রবার ‘ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সিকিউরিটি অফিস’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া যায়। অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট পরিষদের সদস্য লুই জেরাল্ড জিল বলেন, সরকার দ্রুততম সময়ে ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর কাছে সহায়তা পৌঁছাতে কাজ করছে।
তবে বাস্তবে এ প্রচেষ্টা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। বর্তমানে গ্যাংগুলো রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সম্প্রতি কৃষি অঞ্চলেও তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে।
সহিংসতার কার;ণে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে, যা গত ডিসেম্বরের তুলনায় ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি। অনেকেই অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাসাঠাসি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন, যেখানে পানি, খাবার ও চিকিৎসার মতো মৌলিক সেবা নেই। যারা কৃষিকাজে টিকে আছেন, তাদেরকে গ্যাংদের সঙ্গে দরকষাকষি করে জমিতে প্রবেশ করতে হচ্ছে এবং ফসলের একটি অংশ দিতে হচ্ছে চাঁদা হিসেবে।
অর্থনৈতিকভাবে দেশটি মারাত্মক সংকটে পড়েছে। টানা ছয় বছর ধরে মন্দায় থাকা হাইতিতে গত জুলাইয়ে খাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতার কারণে ৬ লাখ ৮০ হাজার শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা আগের সংখ্যার দ্বিগুণ। এরই মধ্যে হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে।