ঢাকা: রাজধানীর খিলক্ষেত-নিকুঞ্জ এলাকার লা মেরিডিয়ান হোটেল সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজটি দীর্ঘ দুই মাস ধরে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রায় দুই মাস আগে ক্রেনবাহী এক ট্রাকলরির ধাক্কায় ব্রিজটি বেঁকে গিয়ে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে বিপজ্জনকভাবে হেলে পড়া এই ব্রিজে প্রতিদিন হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো সংস্কার বা মেরামতের উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকাবাসী।
এ পরিস্থিতিতে শনিবার (১১ অক্টোবর ) ‘খিলক্ষেত-নিকুঞ্জের সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে এলাকাবাসী এক প্রতিবাদী নাগরিক সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করে। নিকুঞ্জ, টানপাড়া, জামতলা, পুরাতন বাজার, সরকার বাড়ি, নামাপাড়া, লেক সিটি এবং খাঁপাড়া এলাকার হাজারো মানুষ এ কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের মিথ্যা আশ্বাস শুনে আমরা ক্লান্ত। বর্তমানে ব্রিজটির যে ভয়াবহ অবস্থা, তাতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর দায়ভার কে নেবে?”
বক্তারা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্রিজের সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, এ সময়ের মধ্যে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ লা মেরিডিয়ান ফুটওভার ব্রিজের পাশাপাশি খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডের ফুটওভার ব্রিজটিও এখন ভগ্নদশায়। দুটি ব্রিজই দ্রুত সংস্কার এবং ভবিষ্যতের জন্য আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন নতুন ব্রিজ নির্মাণের স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে।”
এলাকাবাসীর দাবি—“আর নয় ঝুঁকিতে চলাচল, এবার চাই নিরাপদ ও স্থায়ী সমাধান।”
তাদের এই আন্দোলন প্রমাণ করেছে, সাধারণ মানুষ এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ এবং প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে প্রস্তুত।
মানববন্ধনে নিরাপদ পথচলার লক্ষ্যে ৫ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে- ১) ফুটওভার ব্রিজের অবিলম্বে সংস্কার ও পূর্ণাঙ্গ পুনর্নির্মাণ;
২️) ব্রিজের সম্প্রসারণ রেললাইন পর্যন্ত বৃদ্ধি: বর্তমান ফুটওভার ব্রিজটি যেন শুধুমাত্র সড়ক নয়, পাশের রেললাইন পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা— যাতে পথচারীরা সড়ক ও রেল দুই পাশেই নিরাপদে পারাপার হতে পারেন;
৩️) প্রশস্ত প্রবেশপথ, ছাউনি ও নিরাপদ অপেক্ষা স্থান:ব্রিজের উভয় পাশে সিঁড়ি প্রশস্ত করতে হবে এবং ছাউনিযুক্ত অপেক্ষা স্থান তৈরি করতে হবে, যাতে অফিস সময়ের ভিড়েও মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারেন;
৪) প্রতিবন্ধী, শিশু ও প্রবীণ নাগরিকদের জন্য র্যাম্প বা লিফট: সবার জন্য সমান চলাচলের সুযোগ নিশ্চিতে র্যাম্প বা স্বল্পমূল্যের লিফট স্থাপন করা;
৫) পর্যাপ্ত আলো, সিসি ক্যামেরা ও স্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণ টিম: রাতে নিরাপত্তার জন্য ব্রিজে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা, সিসি ক্যামেরা এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি স্থায়ী মনিটরিং টিম গঠন করা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- জিয়াউর রহমান, রিশাদ মাহমুদ, রিদওয়ান আলভী, আহমেদ সুলতান, মুকুল হোসেন মৃধা, মোঃ জায়েদুল হক, এ এম আইয়ুব, ইঞ্জিনিয়ার মাইন উদ্দিন জাহাঙ্গীর, মোঃ জাকির ভূঁইয়া, মোঃ সলিমুল্লাহ, ইমানুল হক, শামস সোহেল, ওয়াহিদুজ্জামান সুমন, নুরুল আমিন মজুমদার, মোঃ সাইফুল ইসলাম ও রহমতউল্লাহ রাহাত প্রমুখ। বক্তব্য সঞ্চালনা ও উপস্থাপনা করেন ইঞ্জিনিয়ার মোঃ নজরুল ইসলাম।