Saturday 11 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভালোবাসায় পাখিদের আগলে রেখেছেন ব্যবসায়ী জাকির

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ অক্টোবর ২০২৫ ২২:৩৬ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৫ ০০:০৮

পাখিদের খাবার খাওয়াচ্ছেন জাকির হোসেন। ছবি: সারাবাংলা

বগুড়া: নানা প্রজাতির পাখিদের ভালোবেসে আগলে রেখেছেন হোটেল ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন। মানুষের কোলাহল দেখে পাখি উড়ে গেলেও পাখি প্রেমিক জাকিরের খাবারের অপেক্ষায় থাকে পাখিগুলো। খাবার না পাওয়া পর্যন্ত পাখিগুলো তার হোটেলের সামনে অপেক্ষা করে। মাটিতে খাবার ছিটিয়ে দিলেই ঝাঁজে ঝাঁকে টুনটুনি, শালিক, চড়ুই ও দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ছুটে আসে। প্রথম দিকে অল্প কিছু পাখি এলেও ধীরে ধীরে শতশত পাখিরা খাবার খেতে আসে। খাবার খুঁজতে আসা পাখিদের দেখে তার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে তিনি প্রতিদিন তিন বেলা শালিক, চড়ুই ও দোয়েল পাখিদের তার হোটেলের পরোটা, পুড়ি, সিঙ্গাড়া ও সমুচা এবং চানাচুর খাবার দেন।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বগুড়ার শেরপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আল্লাহর দান হোটেলের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন পাখিদের খাবার খাইয়ে আসছেন। ফলে, ধীরে ধীরে পাখির সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে।

জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ আল্লাহর দান নামে খাবারের হোটেল ব্যবসা শুরু করেন জাকির হোসেন। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি অসহায় মানুষদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুব একটা বড় না হলেও ভালোবাসার কমতি নেই। পাখির প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে তিনি স্থানীয়দের মাঝে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন। প্রতিদিন দিন তিনি ৮০০টাকা থেকে এক হাজার টাকার খাবার পাখিদের খাইয়ে থাকেন। এছাড়া অসহায় মানুষের তিনি বিনামূল্যে খাবার খাওয়ান।

স্থানীয়রা জানান, জাকিরের হোটেলের আশপাশে ও সড়কের ডিভাইডারে লাগানো গাছে হাজার হাজার পাখি আশ্রয় নিয়েছে কয়েক বছর ধরে। টুনটুনি, শালিক, চড়ুই ও দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রাতের বেলায় আশ্রয় নেয় এবং দিনের আলো ফুটতেই কিচির মিচির করে বের হয়ে যায়। প্রতিদিন তিনবেলা সড়কে পাখিরা কোলাহল করে পাখি প্রেমিক জাকিরের অপেক্ষায়। খাবার খেয়ে আবার চলে যায়। পাখিদের কিচির মিচির শব্দে ঘুম থেকে জেগে হোটেল খুলে বসেন তিনি। সকালে ঘুম ভাঙ্গানোর দায়িত্বে থাকা পাখিদের খাবার দিলেই পাখিরা খাবার খেয়ে উড়ে চলে যায়। এরপর থেকে নিয়মিত তার দোকানে পাখিরা খাবার খেতে আসে। প্রথম দিকে অল্প কিছু পাখি এলেও ধীরে ধীরে শত শত পাখিরা খাবার খেতে আসে। খাবার খুঁজতে আসা পাখিদের দেখে তার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।

আল্লাহর দান হোটেলের স্বত্বাধিকার জাকির হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই তিনি পাখিদের ভালোবাসেন। পাখির কিচির মিচির ডাকে সকালে তার ঘুম ভাঙ্গতো। যে কারণে পাখিদের প্রতি তার অবাধ ভালোবাসা। পাঁচ বছর ধরে দেশীয় প্রজাতির পাখিদের খাবার দিয়ে আসছেন তিনি। প্রথমে অল্প কিছু পাখি আসতো খাবার খেতে। পরে শত শত পাখি নিয়মিত খাবার খেতে আসছে। এসব পাখিদের প্রতিদিন নিজের বানানো পরোটা, সিঙ্গাড়া ও সমুচা তিনবার খেতে দিই। এছাড়া শালিক পাখি চানাচুর বেশি খেয়ে থাকে। তাদের জন্য চানাচুর কিনে এনে খেতে দিই। পাখিদের খাবার দিতে প্রতিদিন অন্তত ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা খরচ হয়। তবুও ভালোলাগে। কারণ, এসব পাখির কিচির-মিচির শব্দ এবং তাদের উপস্থিতি তাকে মুগ্ধ করে। এতে করে মনেও এক ধরনের শান্তি মিলে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদের জীবিত থাকা জরুরী।’

তিনি বলেন, সকালে খাবার দিতে দেরি হলে কিচিমিচির করে। খাবারের জন্য অপেক্ষা করে। আবার খাবার দিলে খেয়ে চলে যায়। বিকালেও নীড়ে ফেরার আগে দোকানের সামনে অপেক্ষা করে।

আল্লাহর দান হোটেল এর কর্মচারীরা জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ পাখিদের খাবার দেন হোটেলের মালিক জাকির হোসেন। নিয়মিত খাবার দিয়ে তিনি দেশীয় জাতের বিভিন্ন পাখির সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এটি একটি ভালো কাজ। তাদের মত, ‘আমাদের পাখিদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে।’

স্থানীয় সংবাদকর্মী আইয়ুব আলী জানান, ‘জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পাখি। আমাদের দেশে দেশীয় প্রজাতির পাখি বিলপ্তির পথে। এর কারণ হচ্ছে পাখির প্রতি মানুষের আন্তরিকতার অভাব। তবে শেরপুর বাসট্যান্ড এলাকায় জাকিরের মতো অন্যরা খাবার খাইয়ে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। যা পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে হচ্ছে। তাদের মত প্রতিটি মানুষই যেন পশু-পাখির প্রতি যত্নবান হয়ে উঠেন।’

তিনি আরো বলেন, জাকির হোসেন শুধু পাখিদেরকেই খাওয়ান না তিনি সুযোগ পেলে গরীব-দুখী মানুষদের বিনামূল্যে খাওয়ান। দান করেন নিরবে। তিনি কখনই তার এসব গুণের কথা প্রচার করেননি।

সারাবাংলা/জিজি

জাকির হোসেন পাখি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর