ঢাকা: দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবন। গতবছরও যার দেশে ফেরা নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে গেছে। শঙ্কাও অনেকটা দূরীভূত। তার ওপর আনা মিথ্যা মামলার সব চার্জ উঠে গেছে, নেই কোনো অবৈধ রায়ও। তাহলে কবে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই প্রশ্ন গত একবছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচিত হলেও সঠিক উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। তারেক রহমান নিজেই গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শিগগিরই দেশে ফিরবেন তিনি এবং নির্বাচনেও অংশ নেবেন। সেক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার আগেই ফিরতে হবে তাকে। কিন্তু নির্দিষ্ট দিন-তারিখ জানাননি তিনি। তবে তারেকের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, নভেম্বরে ফিরতে পারেন। তবে সঠিক তারিখ তিনি ছাড়া কেউ জানেন না।
তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন- এমন বক্তব্য বিএনপির নানা মহল থেকে আসছে গত একবছর ধরে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের মানুষ ধারণা করেছিল, হয়তো কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন তিনি। কিন্তু তিনি ফেরেননি। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন হতাশা বিরাজ করছে, তেমনি দেশের সাধারণ মানুষও অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে রয়েছেন। কবে ফিরবেন তারেক রহমান? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বার বারই বলেছেন, ‘তিনি (তারেক রহমান) দ্রুতই আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আমরা তার অপেক্ষায় আছি।’
গত ৭ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তখনও অনেকেই বলেছিলেন, চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়া যখন দেশে ফিরবেন তখন তার সঙ্গে তারেক রহমানও ফিরতে পারেন। ১১৭ দিন লন্ডনে চিকিৎসা শেষে গত ৬ মে দেশে ফেরেন বেগম খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান দেশে এলেও আসেননি তারেক রহমান ও তার কন্যা জাইমা রহমান। সে সময় বিএনপি নেতারা বলেন, জোবাইদা রহমান লন্ডনে ফিরে গিয়ে স্বামী তারেক রহমানসহ শিগগিরই দেশে ফিরবেন। কিন্তু জোবাইদা রহমান দেশে একমাস কাটিয়ে গত ৫ জুন লন্ডনে ফিরে গেছেন। এর পরও ফেরেননি তারেক রহমান।
এদিকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।’ তার পরও প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গেছে। কিন্তু এখনো তারেক রহমানের দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট তারিখ পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ ও লন্ডনে অবস্থানরত দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে। তাদের ভাষ্যমতে, আগামী নভেম্বরের যেকোনো দিন দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেটা নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোনো নেতাই মিডিয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা বলছেন, নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারেক রহমান। সেজন্য দেশে তার থাকা, নিরাপত্তা ও নানা বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, তারেক রহমান দেশে ফেরার আগে সৌদি আরবে ওমরা করতে যাবেন। সেখান থেকে সরাসরি ঢাকা ফিরবেন। এ বিষয়ে বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চাইলে কেউ সঠিক জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। জানা গেছে, যুক্তরাজ্য থেকে সৌদি আরব যাওয়া এবং সেখান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য তারেক রহমানের যে ভ্রমণ পাস লাগবে সেটার বিষয়ে লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ চলছে।
জানতে চাইলে ‘আমরা বিএনপির পরিবার’র আহবায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই। এটুকু বলতে পারি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেদিন আসার কথা বলবেন, সেটাই সঠিক। অনুমান করে লাভ নেই। তবে উনি খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন- এটা সঠিক। কিন্তু উনি কাউকে কোনো তারিখ বলেননি এবং বলবেনও না।’
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কবে দেশে ফিরবেন সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তার দেশে ফেরার খবর দলের পক্ষ থেকে সময়মতো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তারেক রহমানের আরেক ঘনিষ্ঠজন ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নিজেই বলেছেন, শিগগিরই দেশে ফিরবেন। সেটা অবশ্যই নির্বাচনের আগে। তিনি এটাও বলেছেন যে, নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাহলে ধরে নিতে হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি দেশে ফিরবেন।’
সৌদি আরবে ওমরাহ করতে যাবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, ‘ওমরাহ ধর্মীয় বিষয়। এটা যার যার ব্যক্তিগত ইচ্ছে। উনি যদি ওমরাহ করতে যান, সেটা তখন আপনারা জানতে পারবেন। আগাম কিছু বলা সম্ভব না।’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ১/১১ সরকারের সময় চিকিৎসার জন্য স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জায়মা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান। ওই সময় থেকেই তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন।