Sunday 12 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শিক্ষা ও গবেষণায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বদ্ধপরিকর’

সারাবাংলা ডেস্ক
১২ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:০১

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

বেরোবি: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ রোববার (১২ অক্টোবর)। অবহেলিত উত্তরের জনপদে দীর্ঘদিন মানুষের প্রাণের দাবি ছিল একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। ২০০৮ সালে রংপুর অঞ্চলের শিক্ষানুরাগী বিভিন্ন শ্রেণি পেশা মানুষের দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফসল এ বিদ্যাপীঠ। জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন সংকট, সংকুলান নিয়ে উচ্চশিক্ষার এ প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ও গবেষণায় উন্নত জাতি গঠনের মূলমন্ত্র নিয়ে পথচলা শুরু করেছে। আমরা দৃঢ় আশাবাদী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম গবেষণাধর্মী উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানরূপে জাতিগঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১২ অক্টোবর) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে উপাচার্য ড. মো. শওকাত আলী এসব কথা বলেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে উপাচার্যের বলা বিস্তারিত কথাগুলো পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো-

পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু বলেছিলেন—’দেশ ভালো হয় যদি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো হয়।’ মানুষ অসুস্থ হলে যেমন চিকিৎসকের কাছে যায় তেমনি রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোতে বৈষম্য, নানাবিধ সমস্যায় তার চিকিৎসক বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের সমস্যা নির্ণয় করে যথোপযুক্ত প্রেসক্রিপশন দেয়। সেই সঙ্গে সমাধানের পথ নির্মাণ করে রাষ্ট্রকে উন্নতির দিকে ধাবিত করে। পৃথিবীর যতগুলো উন্নত রাষ্ট্র আছে সেসব দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা যাবতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির পেছনে সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান অপরিসীম।

কিন্তু আমরা এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে ছিলাম। এর অবশ্য কারণও রয়েছে অনেক। কিন্তু সংকট পর্যালোচনা করে উত্তরণের পথে যাওয়াই গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কেবল গবেষক বের হবে বিষয়টি কেবল তা নয়। গবেষক ও গবেষণার সাথে দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করাও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা শেষে কর্মক্ষেত্রে উপর্যুক্ত গ্র্যাজুয়েট বের করাও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘আমাদের উচ্চশিক্ষার সিঁড়ি আমরা নিজেরা গড়ে তুলিনি। গড়ে তুলেছে অন্যরা তাদের ধাঁচে ফেলে (শিক্ষা প্রবন্ধ)।’

গণঅভ্যুত্থান উত্তর এ সময়ে ঔপনিবেশিক কাঠামো থেকে বের হয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রকৃত গবেষণামুখী উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এ দিকে ধাবিত হওয়ার অভিলক্ষ্যে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষকধর্মী শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি, মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করতে বৃত্তি প্রদান, ডিন অ্যাওয়ার্ড চালুসহ নিয়মিত রিসার্চ জার্নাল প্রকাশ করতে আমরা যথোপযুক্ত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছি। তাছাড়া অ্যাকাডেমিক ভবন সম্প্রসারণ, আন্তজার্তিক অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ, নতুন ভবন নির্মাণ, হল নির্মাণ,
মাস্টার প্ল্যান তৈরিসহ বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য নিরন্তর কাজ চলছে।

পূর্বের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির নামে যে ধরনের মানসিক টর্চার ছিল হলগুলোতে আমরা এরই মধ্যে এসব শূন্যের কোটায় নিয়ে এসেছি। দলীয় ও লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি বন্ধে আইন পাশ হয়েছে। হলের সিট বণ্টনে আমরা শতভাগ ন্যায় ও নিয়মনীতি অনুসরণ করছি। সিট বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ করতে পেরেছি। তাছাড়া দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের সন্তানদের বিভিন্ন উপবৃত্তি ব্যবস্থা চালু হয়েছে। শিক্ষকদের আরও সময়োপযোগী, দক্ষ করে গড়ে তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি বিভিন্ন ট্রেনিং, গবেষণা কর্মশালা, প্রশিক্ষণের আয়োজন করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ, সাংগঠনিকবোধ ও সচেতন করে তুলতে আমরা সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবো। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সমাবর্তনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। যা এ বছরই অনুষ্ঠিত হবে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাখাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আমরা বাংলা অ্যাকাডেমি থেকে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর পৈতৃক বাড়িটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে গবেষণা ইনস্টিটিউট করার প্রস্তাব পেয়েছি। এরই মধ্যে আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহচর্যে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা পেলে তা উত্তরবঙ্গের জন্য স্বতন্ত্র শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণার সমৃদ্ধতম অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানরূপে দাঁড়াবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গবেষকরা আবাসিক হিসেবে অবস্থান করে গবেষণা করতে পারবেন। সেই সঙ্গে বেগম রোকেয়ার পৈতৃক নিবাস, স্মৃতি সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হবে। যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও সমগ্র বাংলাদেশের জন্য মাইলফলক দৃষ্টান্ত হবে।

১৭ বছরের পথচলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা দেশ ও দেশের বাইরে গবেষণাসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করছে। তাদের সামগ্রিক সফলতা অর্জন এক অর্থে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন। সাম্প্রতিক সময়ে ২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদ এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। বৈষম্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার বলিষ্ঠ সাহস ও প্রতিবাদস্বরুপ নিজের প্রাণ উৎসর্গ গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সমস্ত বৈষম্য, অগণতান্ত্রিক, অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম-এর বিরুদ্ধে আবু সাঈদের মতো দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে এ প্রাণের বিদ্যাপীঠকে একটি গবেষণামুখী উচ্চশিক্ষালয় সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে এবং তাদের শ্রম, মেধায় উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি আমার শিক্ষার্থীদের প্রতি এ দৃঢ় আশা ও আস্থা রাখি।

সারাবাংলা/এনজে

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর