কুমিল্লা: কুমিল্লা মহানগরীতে ৫ আগস্ট আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ হত্যা মামলার চার্জশিটে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক আহবায়ক ইশতিয়াক সরকার বিপুর নাম অর্ন্তভুক্ত করে আদালতে প্রেরণ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর দুপুরে ইসতিয়াক সরকার বিপু মোগলটুলি এলাকা থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে পূবালী চত্বরে যায়। এরপর পুলিশের ফোনে খবর পায় কুমিল্লা কোতয়ালি থানায় হামলা হতে পারে। তখন বিকেলে সে তার নেতাকর্মীদের নিয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় উপস্থিত হন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, বিএনপি নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার ও সাবেক কাউন্সিলর গোলাম কিবরিয়াসহ মহানগর ও ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রজনতা।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ থানায় মাইকে বক্তব্য রাখেন, যার ভিডিও ফুটেজ কোতয়ালি থানার সিসিটিভি ক্যামেরায় ও বিভিন্ন কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো রয়েছে। রাতে যখন বিপু এলাকায় ফিরে আসেন তখন জানতে পারেন আইনজীবী আবুল কালাম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একই ব্যক্তি একই সময়ে পৃথক দুইটি ঘটনায় উপস্থিত থাকতে পারেন না। বিএনপিপন্থী আইনজীবি আবুল কালাম আজাদ হত্যার ঘটনাটি জঘন্যতম অপরাধ। যারা এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করেছে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। হত্যার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মোবাইলে ধারণকৃত ফুটেজ অবশ্যই পুলিশের কাছে আছে। ওই ফুটেজসমূহ যাচাইবাছাই করে হত্যার সময় বিপুর না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরও চার্জশিটে তার নাম অনেকটা প্রতিহিংসাবশত অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে ইসতিয়াক সরকার বিপু স্বাভাবিকভাবেই আসামির তালিকায় ছিলেন না। কিন্তু পরে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে বিপুকে জড়িত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যে ব্যক্তি ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে বিপুর নামটি জড়ায় সেও আইনজীবী হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামি নয়। পরবর্তীতে অন্য মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হলে তাকে এবং তার পরিবারকে বুঝানো হয় তার গ্রেফতারের সঙ্গে বিপুর সম্পর্ক রয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে বিপুকে জড়িয়ে বক্তব্য দেয়। এমনকি এই হত্যা মামলার বাদী নিজেও ইসতিয়াক সরকার বিপু নামে কাউকে চেনেন না। বাদী এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন- ‘না আমি ওই নামের কাউকে চিনি না। নামটি আমি এই প্রথম আপনার মুখেই শুনলাম।’ ফলে এটা নিশ্চিত যে, তাকে পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই হত্যা মামলায় ফাসাঁনো হয়েছে।
৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইমতিয়াজ সরকার নিপু জানান, ‘আমার ছোট ভাই ইসতিয়াক সরকার বিপু ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদল কর্মী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। সে ২০১৭ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের দেওয়া দুইটি মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের পর ইসতিয়াক সরকার বিপু ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এই ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর হিসেবে বিপু নিজেকে উপস্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গেই নানামুখী ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ হত্যায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে জড়াতে নানা কূটকৌশল করে তার নাম চার্জশিটে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। মূলত কুসিক নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্যই বিপুকে হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট এর কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, কুমিল্লা জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ইসলামী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম মাস্টার জানান, ‘বিপু ভাইকে আমি ৩০ বছর ধরে চিনি। তিনি পরোপকারী মানুষ। তিনি কোনো হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন না। একটা লোককে রিমান্ডে নিয়ে নাম বলানো হয়েছে। কিন্তু, তিনি নির্দোষ লোক। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।’
কুসিকের ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জামায়াত ইসলামীর নেতা কাজী গোলাম কিবরিয়া জানান, ‘এড. কালাম হত্যা মামলায় কোনোভাবেই ইসতিয়াক সরকার বিপু জড়িত না। আমি ভিপি ওয়াসিম ভাই, নিজাম উদ্দিন কায়সার ভাই ও ইসতিয়াক সরকার বিপু ভাই একসঙ্গে ৫ আগষ্ট কোতয়ালি থানায় ছিলাম। বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে থানাকে রক্ষার জন্য তখন আমরা কাজ করতে ছিলাম। বিপু ভাইয়ের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। একজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে বিপু ভাইয়ের একটু মনোমালিন্য হয়েছিল। তাই বলে উনার সঙ্গে এমন আচরণ করা ঠিক হচ্ছে না। বিপু ভাই নিদোর্ষ, কোনো সন্দেহ নেই।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম জানান, ‘ইসতিয়াক সরকার বিপু ছাত্রদল, যুবদল হয়ে বিএনপির রাজনীতি করছেন। জুলাই আন্দোলনে বিপুর অবদান অবিস্মরণীয়। অ্যাডভোকেট হত্যা মামলার এজাহারেও বিপুর নাম ছিল না। ওই মামলায় একজন আসামিকে গ্রেফতারে বিপু পুলিশকে সহায়তা করেছিল। ওই আসামি রাগের বশে বিপুর বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ মামলাটি নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিপুর মত পরিক্ষীত রাজনীতিবিদকে জড়িয়ে যারা মামলাটিকে নষ্ট করতে চায়, তাদেরকে বর্জন করুন। বিপু ওই দুঘর্টনার সময় আমাদের সঙ্গে কোতয়ালি থানায় ছিল। সিসিটিভি ফুটেজে প্রমাণ আছে। প্রতিহিংসার বশে তার নাম মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু জানান, ‘বিপু ভাই স্বৈরাচার সরকারের সময় মামলা খেয়ে কারাবরণ করেন। ৫ আগষ্ট যখন বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা থানায় যাচ্ছিল, তখন বিএনপির নেতৃবৃন্দ থানায় অবস্থান নিয়ে থানা রক্ষা করেন। তখন বিপু ভাই নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছিলেন। বিপু ভাইকে বিনা কারণে হয়রানি করা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’