Sunday 12 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অন্তর্বর্তী সরকার কেন মাশুল বাড়াবে— প্রশ্ন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:১০ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৪৯

চট্টগ্রামে হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের’ ব্যানারে সমন্বয় সভা। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরে ৪১ শতাংশ হারে বাড়ানো মাশুল (ট্যারিফ) কার্যকরের আগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকার কেন ট্যারিফ বাড়াবে— এমন প্রশ্ন তুলে এ সিদ্ধান্তকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তারা।

চট্টগ্রাম বন্দরে অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের’ ব্যানারে এক সমন্বয় সভায় তারা বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন।

সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমীরুল হক বলেন, ‘৪১ শতাংশ হারে ট্যারিফ বাড়িয়ে দেওয়া হল। হঠাৎ এটা কেন? মোংলা বন্দরে তো বাড়েনি, পায়রায় তো বাড়েনি, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরে কেন? এই ট্যারিফ বাড়ানো একটা ষড়যন্ত্র। আমাদের বন্দরকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, তাহলে বন্দরে নেই কেন? যারা বন্দর ব্যবহার করে তাদের কথা শুনবে না, ট্যারিফ বাড়াবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের কেন ট্যারিফ বাড়াতে হবে? এটা তাদের কাজ?’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছি, কচি খোকা নয়। আমরা ব্যবসায়ী, আমরা বন্দর ব্যবহার করি, আমরা কারও গোলাম নই। আমার টাকায় বন্দর চলবে আর আমার কথা না শুনে ট্যারিফ বাড়িয়ে দেবে, আমরা কি কলুর বলদ? এই যে ট্যারিফ বাড়াল, এটার পেমেন্ট তো ব্যবসায়ীরা করবে না, জনগণকে করতে হবে। বন্দরকে কস্ট বেইজড ট্যারিফ করতে হবে।’

বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলাপের আগপর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বন্দরকে হঠাৎ করে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়াতে হবে কেন? এটা আমাদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তো এত জবাবদিহি নেই যে, তাদের বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর জন্য উঠে-পড়ে লাগতে হবে! ট্যারিফ বাড়ানোর জন্য কাদের এত বেশি আগ্রহ, তাদের শনাক্ত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্দর নিয়ে খেলা শুরু হয়েছে। এ খেলা খেলতে দেওয়া হবে না। বন্দরে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে একজন প্রতিনিধিকে পরিচালক বানাতে হবে। ’

পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যয় বেশি। তারপর আবারও ট্যারিফ বাড়ানো হচ্ছে। সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসবে পোশাক শিল্পের ওপর। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় চট্টগ্রাম বন্দরকে কখনো লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে?’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর বিরুদ্ধে। এটা বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে। ট্যারিফ বাড়ানোর পর আমাদের প্রোডাকশন খরচ বেড়ে যাবে। পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, দাম বাড়বে। তখন এদেশের গার্মেন্টস থেকে বায়ার আর পোশাক কিনবে না। ভিয়েতনাম, ভারতে চলে যাবে বায়ার।’

বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘বন্দর ব্যবসা করে না, সেবা দেয়। বন্দর লাভ করে। আমরাও চাই না বন্দর লস করুক। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে এটা ট্যারিফ বাড়ানোর সময় নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে নেই। আমরা চাই না বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে আমাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়। এক মাসের জন্য ট্যারিফ আদায় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একমাস সময় শেষ হচ্ছে। আমরা চাই, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করুক, আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন বাড়তি ট্যারিফ আদায় করা না হয়।’

বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এস এম আবু তৈয়বের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বক্তব্য দেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা সব জাহাজ, কনটেইনার ও কার্গো বিল নতুন রেট অনুযায়ী নেওয়া হবে এবং একইভাবে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিসহ সকল বন্দর ব্যবহারকারীরা বর্ধিত হারে মাশুল পরিশোধ করবেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫২টি খাতে মাশুল আদায় করা হয়। সেখান থেকে ২৩টি খাতে মাশুল বাড়ানো হয়েছে ৪১ শতাংশ হারে। এর আগে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বর্ধিত ট্যারিফ আদায়ের পরিপত্র জারি হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তির মুখে নৌপরিবহন উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে সেটা একমাস পিছিয়ে দেওয়া হয়।

প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সবচেয়ে বেশি মাশুল বেড়েছে কনটেইনার পরিবহণ খাতে। প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা বেড়ে নতুন মাশুল দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা। এ হিসেবে প্রতি কনটেইনারে মাশুল বেড়েছে গড়ে ৩৭ শতাংশ।

আবার কনটেইনারবাহী জাহাজের ক্ষেত্রে আমদানি কনটেইনারের জন্য ৫ হাজার ৭২০ টাকা ও রফতানি কনটেইনারের জন্য ৩ হাজার ৪৫ টাকা মাশুল বেড়েছে। প্রতিটি কনটেইনার ওঠানামার ক্ষেত্রে মাশুল বাড়ানো হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। কনটেইনারের প্রতি কেজি পণ্যের জন্য মাশুল আগের ১ টাকা ২৮ পয়সার সঙ্গে আরও ৪৭ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। সার্বিকভাবে শুধুমাত্র ওঠানামাসহ কনটেইনার পরিবহন খাতেই মাশুল বেড়েছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জাহাজের ওয়েটিং চার্জ বেড়েছে ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় ১০০ শতাংশ। কোনো জাহাজ নির্ধারিত সময়ে ভিড়তে না পারলে অর্থাৎ ওয়েটিং টাইম ১২ ঘন্টার বেশি হলে ১০০ শতাংশ, ২৪ ঘণ্টার জন্য ৩০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টার জন্য ৪০০ শতাংশ এবং ৩৬ ঘণ্টার বেশি হলে অতিরিক্ত চার্জ ৯০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। জাহাজের পাইলর্টিং চার্জ ৮০০ মার্কিন ডলার এবং প্রতিবার জাহাজ টেনে আনার টাগ চার্জ ৬ হাজার ৮৩০ ডলার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির কাছে ২১ আসন চায় ১২ দল
১২ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৪৭

শিশুর খাদ্য কতটা নিরাপদ
১২ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর