Monday 13 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত নজরুলের মরদেহ দেশে আনার দাবি স্ত্রীর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৩ অক্টোবর ২০২৫ ২০:৫৮ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ২২:৫০

দুই কন্যাসন্তান কোলে নিহত নজরুলের স্ত্রী আইরিন আক্তার। ছবি: সারাবাংলা

রাজবাড়ী: রাশিয়া গিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিহত নজরুলের মরদেহ দেশে আনার দাবি জানিয়েছে তার স্ত্রী আইরিন আক্তার।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নজরুলের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, গত ৩০ এপ্রিল স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। তিনি সেদিন ব্যাংকে গিয়েছিলেন আমাদেরকে টাকা পাঠানোর জন্য। কিছুক্ষণ পর ফের ফোন করে বলেন, টাকা পাঠানো হলো না, আমাকে নিয়ে যাবে এখন।

এরপর আবার ফোন দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের সঙ্গে মনে হয় আর দেখা হবে না, আর কোনোদিন কথাও হবে না। আজকেই মনে হয় তোমাদের সঙ্গে আমার শেষ কথা। যদি ফোন বন্ধ পাও ধরে নিও আমি আর বেঁচে নেই। আমার চার মেয়েকে দেখে রেখো। তোমাদেরকে আল্লাহর কাছে রেখে গেলাম, তিনিই তোমাদেরকে দেখবেন। আমি দেশে যে টাকা দেনা রয়েছে সেই টাকাসহ তোমাদের যদি কিছু টাকা দিতে পারতাম তাহলে মরেও আমার শান্তি হতো। সেটিই ছিল তার শেষ কথা। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ মেলেনি।’

বিজ্ঞাপন

আইরিন আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘ ৫ মাসের বেশি নিখোঁজ থাকার পর গত ৮ অক্টোবর বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমার নাম্বারে একটি কল আসে। তখন জানানো হয় যুদ্ধে আমার স্বামী মারা গেছে।’

আইরিন বলেন, ‘আমার স্বামী সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ছিলেন। অবসরের পর যা টাকা পেয়েছিল তা ব্যবসায় লাগিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে যান। তখন তিনি জমি বিক্রি করে ১৩ লাখ টাকা নিয়ে দালালের মাধ্যমে রাশিয়া চলে যান। এখন আমাদের অর্থকড়ি কিছুই নেই। পেনশনও আমার নামে করে দেয়নি। সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি, আমার স্বামীর মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। এছাড়াও দালাল ফরিদ মন্ডল ও জসিমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। আমার মতো আর কোনো নারীর জীবন যেন এমন না হয়, কারো যেন সন্তান বাবা হারা না হয়।’

নিহত নজরুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর চরপাড়া গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। নজরুলের স্ত্রী ও চার কন্যা সন্তান আছে। তার বড় মেয়ে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট দুই মেয়ের বয়স ৬ ও ৫ বছর।

নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন এবং ২০২০ সালে অবসর গ্রহণ করে। চাকরি থেকে অবসরের পর বাড়িতে থাকতো। এরপর রাজবাড়ী শহরের শ্রীপুর বাজারে মুদি ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু একটা সময় ব্যবসায় বড় লোকসান হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েন। এই অবস্থায় স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেন তাকে রাশিয়ায় শপিং মলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির লোভ দেখায়। এরপর চলতি ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দালালের প্রলোভনে তিনি রাশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। সেখানে পৌঁছানোর পর এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে তাকে বাধ্য করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয় তাকে। পরিবারের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয় গত ৩০ এপ্রিল।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। সরকারিভাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় মূলত এইসব ক্ষেত্রে আমাদেরকে চিঠি দিয়ে থাকে। কিন্তু, তিনি (নজরুল) যেহেতু বৈধভাবে যাননি তাই প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রাণালয়ের কাজের মধ্যে বিষয়টি নেই। তার পরিবারের সদস্যরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি নিয়ে আসছেন আমার কাছে। তাদের থেকে সেই চিঠিটি দেখতে পেলাম। সেখানে বেশ কিছু কাগজ তাদের দাখিল করতে বলা হয়েছে। রাশিয়ান সরকারি সহায়তা পেতে তাদের এই কাগজগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে হবে। এটাতে আমরা সহযোগিতা করবো। প্রাথমিকভাবে আমাদের সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাধ্যমে এবং জেলা প্রশাসন থেকে তাদের সামকন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার লাশ ফিরিয়ে আনা এবং রাশিয়া সরকারের যে সাহায্য সেটি পেতে আরো যেভাবে সহযোগিতা করা যায় সেই বিষয়টি আমরা দেখবো।’

সারাবাংলা/জিজি
বিজ্ঞাপন

রংপুর সীমান্তে নয় মাসে আটক ৫০১
১৩ অক্টোবর ২০২৫ ২২:২২

আরো

সম্পর্কিত খবর