বগুড়া: এক সময় গ্রাম বা শহর-উভয় জায়গাতেই যোগাযোগের অন্যতম বাহন ছিল প্যাডেল রিকশা। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে, শহরের অলিগলিতে রিকশার টুংটাং শব্দ আজও অনেকের কানে বাজে। এই প্যাডেল রিকশার ক্রিং ক্রিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গতো শহরবাসীর। আশির দশকে প্যাডেল রিকশায় কাপড় দিয়ে ঘিরে চড়তেন নববধূরা। ২০১৬ সালের দিকেও জেলাজুড়ে প্যাডেল রিকশার দাপট ছিল। অথচ সময়ের ব্যবধানে আজ ঐতিহ্য হারাতে যাচ্ছে প্যাডেল রিকশা।
এই রিকশার ব্যবহার কমে গেলেও এর স্মৃতি ও ঐতিহ্য আজও অমলিন। যান্ত্রিকতার এ আধুনিক যুগে কর্মজীবী মানুষের জন্য এখন পেশি শক্তির বদলে আবিষ্কার হয়েছে ইলেকট্রনিক ও সহজলভ্য যানবাহন। বর্তমানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপটে অনেকেটাই হারিয়ে যেতে বসেছে পায়ে টানা রিকশা। ফলে ভাগ্যের চাকা থেমে গেছে প্যাডেল রিকশার।
জানা যায়, একসময় আনাচে কানাচের রাস্তায় অহরহ দেখা মিলতো প্যাডেল রিকশার। কিন্তু বর্তমানে যান্ত্রিকতা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল রিকশা।
কয়েক বছর আগেও প্যাডেল রিকশার বেলের ক্রিং ক্রিং আর টুং টাং ঘুম ভাঙতো বগুড়ার মানুষের। তবে সময়ের সঙ্গে সেই প্যাডেল রিকশা এখন বিলিনের পথে। মানুষ এখন আর ঘাম ঝরাতে চায় না। শরীরে বাতাস লাগিয়ে শ্রম ও সময় বাঁচিয়ে বাড়তি আয় করতে চায়। প্যাডেল রিকশায় পরিশ্রম বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় আয় কম। আর অটোরিকশায় পরিশ্রম কম হলেও আয় বেশি। সে কারণে অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় প্যাডেল রিকশা ছেড়ে চালকরা এখন ঝুঁকছেন অটোরিকশার দিকে।
বর্তমানে বগুড়া শহরে হাতেগোনা ৫০-৬০টির মতো প্যাডেল রিকশা থাকলেও অটোরিকশার ভিড়ে তা এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মাত্র ৭-৮ বছরের ব্যবধানে সে জায়গা দখল করেছে অটোরিকশা। গ্রাম থেকে শহর সবখানেই এখন অটোরিকশার দৌরাত্ব।
যে কয়টা প্যাডেল চালিত রিকশা চলছে সেগুলোও চালাচ্ছেন বৃদ্ধরা। যাদের আয়েও পড়েছে ভাটা। টাকার অভাবে অটোরিকশা কিনতে না পারা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে সাহস না পাওয়ায় তারা প্যাডেল রিকশা চালাচ্ছেন। ফলে প্যাডেল রিকশার জায়গা পুরোটাই দখল করেছে অটোরিকশা। অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ায় প্যাডেল রিকশা চালকদের এখন করুণ দশা। সংসার চালানোর তাগিদে অনেকে ধরে রেখেছেন এই প্যাডেল রিকশা। আগামী প্রজন্ম হয়তো জানবে না প্যাডেল রিকশার গল্প।
প্যাডেল চালিত রিক্সা চালক ৬৫ বছরের বৃদ্ধ ওমর আলী জানান, তিনি বগুড়া পৌরসভার ২০নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি পায়ে টানা রিকশা চালিয়ে আসছেন। তার দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন রিকশার উপার্জন থেকে। কয়েক বছর আগেও দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করতেন। তবে যাত্রীরা এখন আর প্যাডেল রিকশায় না উঠায় আয়ে ভাটা পড়েছে।
আরেক প্যাডিল রিকশা চালক জালাল উদ্দিন জানান, তিনি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বেলঘুচা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ প্যাডেল রিকশা চালান। জীবিকার তাগিতে তিনি প্রতিদিন শহরে আসেন রিকশা চালাতে। ভাড়ায় রিকশা চালিয়ে সামান্য যা পান, তা দিয়ে সংসারের খরচ যোগান।
তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন আর প্যাডেল রিকশায় উঠতে চায় না। এজন্য বেশির ভাগ সময় অলস বসে থাকতে হয়। প্যাডেল রিকশায় যেখানে ৫০ টাকা ভাড়া, সেখানে অটোরিকশা ৩০ টাকায় হু হু করে নিয়ে যায়। আমরা চেয়ে থাকি। আগে যেখানে দিনে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা উপার্জন ছিল। এখন সেটা নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে। অভাবের সংসারে অটোরিকশা কেনার সামর্থ না থাকায় প্যাডেলের রিকশাই ভরসা।’
বগুড়ার ব্যবসায়ী আরমান হোসেন জানান, শহরে প্যাডেল রিকশা খুব কম চোখে পড়ে। মানুষ এখন সময় বাঁচাতে অটোরিকশায় বেশি যাতয়াত করেন। তবে সময় বাঁচলেও অটোরিকশার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।