ঢাকা: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, বিএনপি এখনো দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। নির্বাচন অনেক আগেই হতে পারত, কিন্তু আমার মনে হয় বিএনপিকে ঠেকানোর জন্যই ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন বিলম্বিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আফসার আহমদ সিদ্দিকীর ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভাটি আফসার আহম্মদ সিদ্দিকী স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে।
দুদু বলেন, ‘বিএনপি এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, নির্বাচন অনেক আগেই, প্রায় তিন মাসের মধ্যেই হতে পারত। আমার বিবেচনায় মনে হয়েছে, বিএনপিকে ঠেকানোর জন্যই নির্বাচনটি অযথা বিলম্বিত করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে নির্বাচনের সময় পিছিয়ে গেছে। তবে এই নির্বাচন যখনই হোক না কেন, মানুষ প্রত্যাশা করে ও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে বিএনপি, ধানের শীষের প্রতীক, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশে এক ভূমিধস বিজয় অর্জন করবে এবং বিএনপি পুনরায় সরকার গঠন করবে।’
তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) এখনো বেঁচে আছেন, তবে কিছুটা দৃষ্টির আড়ালে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় নেত্রী, মমতা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক সংগঠন আদর্শ, কর্মসূচি এবং নিবেদিত কর্মী ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। এই বাস্তবতা আমরা আওয়ামী লীগের পতনের মধ্য দিয়ে দেখেছি। একইভাবে লক্ষ্য করেছি জাতীয় পার্টির নাম আছে, কিন্তু কার্যত দল হিসেবে আর কোনো অস্তিত্ব নেই। আর আওয়ামী লীগ এখন ইতিহাসের এক অধ্যায় মাত্র। আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগ আর কখনো রাজনীতিতে কার্যকরভাবে ফিরে আসতে পারবে না এটা রাজনীতি সচেতন সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করে। মাঝে মাঝে দু-একটি বিচ্ছিন্ন মিছিল করলেই কোনো সংগঠন দাঁড়িয়ে যাবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।’
তিনি বলেন, ‘দিন যত যাবে, শেখ হাসিনা মৃত্যুর দিকে তত ধাবিত হবেন। সময় একদিন তাকে সময়ের কাছেই জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে। কতটা নির্লজ্জ হলে একজন মানুষ গণহত্যা সংঘটনের পর, দেশের ব্যাংক লুটপাটের পরও জাতির কাছে ক্ষমা না চেয়ে, দুঃখ প্রকাশ না করেও রাজনীতি করতে চাইতে পারেন! জাতির কাছে এখনো পর্যন্ত তিনি বা তার দল কেউই ক্ষমা চাননি, অনুতাপ প্রকাশ করেননি। তবুও তারা আবার রাজনীতি করতে চায় এটাই বিস্ময়কর।’
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন গণতন্ত্র টিকে থাকবে; আর স্বৈরতন্ত্র এই দেশে আর ফিরে আসতে পারবে না। আমরা একে ইতিহাসের রায় হিসেবেই দেখি।’
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরে আসা পর্যন্ত আমাদের ঐক্য ভাঙা যাবে না। আমাদের সকলেই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ আমরা লক্ষ্য করছি বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন মহল এমন চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে গণতন্ত্র এগোতে না পারে। সেই কারণে একসঙ্গে থেকে ঐক্য বজায় রাখতে হবে এবং শত্রুকে মোকাবিলা করতে হবে।’
আফসার সিদ্দিকীর স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও বলেন, ‘যশোরে আফসার সিদ্দিকী ও তরিকুল ভাই—তারা আমাদের নেতা ছিলেন। এখন তাদের কেউই বেঁচে নেই; সবাই পরলোকগমন করেছেন। কিন্তু তাদের স্মৃতি, আদর্শ, লক্ষ্য ও লড়াই আমাদের জন্য এখনো অনুপ্রেরণার উৎস।’
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তখন সবাই তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করতাম যে রাজনীতি যেন রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকে। এখনকার পরিস্থিতি আর সেই সময়ের পরিস্থিতির মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আফসার সিদ্দিকী ও তরিকুল ইসলামদের মতো নেতাদের নিয়ে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একসময় বিএনপি গড়ে তুলেছিলেন। সেই বিএনপি এখনো পর্যন্ত নানা ঘাত-প্রতিঘাত, নির্যাতন ও কারাবরণ উপেক্ষা করেও গণতন্ত্রের পক্ষে অবিচল আছে।’
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক জাহানারা সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি’র সহ তথ্যবিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, বিএনপি’র সহ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, কৃষকদলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ।