পঞ্চগড়: জেলায় চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ভাতের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে তার প্রতিবেশি চাচা নজরুল ইসলামকে (৫৩) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাসুদ পারভেজ এই দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করা হয়।
আসামী নজরুল ইসলামের পঞ্চগড় সদর উপজেলায় সাতমেড়া ইউনিয়নের খেঁকিপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ওই শিশুটি অভাবের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছিলেন। বাবা মারা যাওয়ায় তার এক চাচা তার মাকে বিয়ে করে। সংসারে অভাবের কারণে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটতো শিশুটির। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ শিশুটির বাড়িতে কেউ না থাকায় রাস্তা থেকে তাকে ভাত খাওয়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশি চাচা নজরুল ইসলাম। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ঘরে নিয়ে শিশুটিকে মুখ চেপে ধর্ষণ করে নজরুল।
এ সময় শিশুটির রক্তক্ষরণ হলে তার হাতে ৫০০ টাকার একটি নোট গুজে দেয় সে। এমনকি বিষয়টি কাউকে জানালে ছুরি দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে একমাস ধরে শিশুটিকে ধর্ষণ করে নজরুল। এক পর্যায়ে শিশুটি ২৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে শারীরিক পরিবর্তন দেখে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়।
পরে শিশুটির মা তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে সব ঘটনা জানায়। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে নজরুল ইসলামের ছেলে হামিদার রহমান ১ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা ও জোর করে স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার চেষ্টা করে। এমনকি সন্তান গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। স্থানীয় প্রভাবশালীরাও সমঝোতার জন্য চাপ দিতে থাকে।
এক পর্যায়ে ন্যায় বিচারের আশায় ৪ সেপ্টেম্বর আদালতে নজরুল ও তার ছেলে হামিদারকে আসামি করে মামলা দায়ের করে শিশুটির মা। এরপর দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার আদালত এই রায় দেন। তবে রায়ে নজরুলের ছেলে হামিদারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা ওই শিশুকে ধর্ষণের ঘটনাটি আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আদালত আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। এই রায়ে আমরা এবং বাদী সন্তুষ্ট।’