ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর রুপনগর রাসায়নিক গোডাউন ও পোশাক কারখানায় লাগা আগুনে নিহত ১৬ জনের মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। এর পরপরই ছুটে আসেন স্বজনরা। অপেক্ষা করছেন মরদেহ সনাক্ত করার জন্য।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে জরুরি বিভাগের মর্গে গিয়ে দেখা যায় নিখোঁজ স্বজনদের ভিড়। মরদেহ দেখতে না পেরে তারা আক্ষেপ করতে থাকেন। অনেকেই নিখোঁজ স্বজনদের ছবি নিয়ে এসেছে। জীবিত না পেলেও মরদেহ যেন পায় তারা।
এই ঘটনায় নিখোঁজ মার্জিয়া সুলতানা (১৮) ও তার স্বামী জয় মিয়াকে (২০) খুঁজতে ঢাকা মেডিকেলে আসেন তাদের স্বজনরা। মার্জিয়ার বাবা সুলতান মিয়া জানান, তাদের বাড়ি বরগুনা জেলার ধর্মপাশা উপজেলায়। তার মেয়ে মার্জিয়া ও জামাই জয় ওই গার্মেন্টে কাজ করতো। তারা রুপনগর শিয়ালবাড়ি এলাকায় থাকতো। জয় অপারেটর ও মার্জিয়া হেলপারের কাজ করতো।
তিনি বলেন, ‘আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তবে তাদেরকে খুঁজে পাই না। পরে অনেকগুলো মরদেহ উদ্ধার হয়েছে শুনে ঢাকা মেডিকেলে আসি। কিন্তু রাতে আমাদের মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মার্জিয়ার চারমাস আগে বিয়ে হয়েছে। যদি আমার মেয়ে মরেও থাকে তবে তাদের মরদেহ তো পাবো। তাই হাসপাতালে ছুটে আসি।‘
নিখোঁজ সানোয়ার হোসেনের (২৫) বড় ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার নিচপাড়া গ্রামে। সানোয়ার বর্তমানে রুপনগর শিয়ালবাড়ি এলাকায় থাকতো। এবং আরএন গার্মেন্টের তিনতলায় কাজ করতো।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে না পেয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ করেও কোথাও সানোয়ারকে পাই না। পরে ধরে নেই সানোয়ার আর বেঁচে নাই। পরে ঢাকা মেডিকেলে আসি সনাক্তের অপেক্ষায়।’
নিখোঁজ মৌসুমীর আক্তারের (১৮) বোন জামাই আব্দুল কাইয়ুম জানান, তাদের বাড়ি লারমনিরহাট হাতিবান্ধা উপজেলার কেতলিবাড়ি গ্রামে। বর্তমানে রুপনগর শিয়াল বাড়ি আবাসিক এলাকায় থাকতো। এবং যে ভবনে আগুন লেগেছে তার পাশের পোশাক কারখানায় কাজ করতো।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর অনেক হাসপাতালে তাকে খুঁজি। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাইনি। তাই মরদেহ উদ্ধারের কথা শুনে ঢাকা মেডিকেলে আসি। এখন মরদেহ দেখার অপক্ষায় আছি।’
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনটি অ্যাম্বুলেন্সে যোগে ১৬ মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে ৯ জন পুরুষ ও ৭ জন মহিলা। এদের বেশিরভাগই দগ্ধ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আপাতত মরদেহগুলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। বুধবার মরদেহ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তারপর আইনুযায়ী পর্যায়ক্রমে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’