পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জেলা জামায়াতে ইসলামী।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল থেকেই এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের বুধবার সকাল ১১টা থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চুয়াডাঙ্গা জেলা আমীর ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী রুহুল আমিন।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন,’বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী এবং সৎ মানুষের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর আমরা নতুন স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি। এখন জাতীয় নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছি, যা জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামী চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সেক্রেটারী এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, সহকারী সেক্রেটারী ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল, উলামা বিভাগের সভাপতি মাওলানা ইসরাইল হোসেন, তালিমুল কোরআন বিভাগের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দিন, প্রশিক্ষণ বিভাগের সভাপতি জিয়াউল হক, সমাজকল্যাণ বিভাগের সভাপতি আলতাফ হুসাইন, অর্থ সম্পাদক কামাল উদ্দিন৷ আইটি বিভাগের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, যুব বিভাগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ হুসাইন টিপু, আইন বিষযক সভাপতি দারুস সালাম, সভাপতি মাওলানা হাফিজুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা জামায়াতের আমীর নায়েব আলী ও সেক্রেটারী আবেদ- উদ দৌলা টিটন, চুয়াডাঙ্গা পৌর জামায়াতের আমীর এ্যাডভোকেট হাসিবুল ইসলাম প্রমুখ।
মানববন্ধনে জেলা জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর শাখার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা পাঁচ দফা দাবির পক্ষে বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
নীলফামারী:
নীলফামারী সদরের চৌরঙ্গী মোড়ে সকাল ১০টায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমীর ও নীলফামারী-১ আসনের জামায়াত মনোনিত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ড. খায়রুল আনাম, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী ও নীলফামারী-২ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতিফ, নীলফামারী-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ওবায়দুল্লাহ সালাফী, সৈয়দপুর উপজেলা আমীর ও নীলফামারী-০৪ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ আব্দুল মুনতাকিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মানববন্ধনে জেলা জামায়াতের আমীর বলেন, ‘জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।’ এছাড়া, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচারের ব্যবস্থা, স্বৈরাচারপন্থী দলসমূহ বিশেষ করে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবী জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সব দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে জাতীয় সংসদে, সকল দলের প্রতিনিধি কথা বলতে পারবে। সংসদ একটি দলের হয়ে উঠবে না, এমনকি দেশে একটি দলের আধিপত্য থাকবে না। এ কারণে পিআর পদ্ধতি এখন মানুষের আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে। আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দেশের মানুষের অংশগ্রহণ বোঝেন এবং এই দাবি মেনে নেন।’
গাজীপুর:
শ্রীপুর উপজেলা কার্যালয়ের সামনে বুধবার দুপুরে উপজেলা আমির মাওলানা নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমির ও গাজীপুর-৩ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী ড. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোটারের ভোটের মূল্যায়ন হবে এবং জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।” তিনি আরও বলেন, “বিগত আন্দোলনের সময় নারী, পুরুষ, শিশু, ছাত্র ও শ্রমিকসহ যাদের হত্যা করা হয়েছে—তাদের হত্যার বিচার করতে হবে। পাশাপাশি, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলসহ যেসব রাজনৈতিক দল জনগণের অধিকার হরণে জড়িত, তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।”
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যতদিন পর্যন্ত আমাদের পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হবে, ততদিন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায় ও ইনসাফের বাংলাদেশ—যেখানে থাকবে না কোনো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বা মামলাবাজি।”
মানববন্ধনে জেলা ও উপজেলা জামায়াতের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
পাবনা:
পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট দিতে হবে। জুলাই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যাশায় জাতি পুরাতনকে বিতাড়িত করেছে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে নতুন-নতুন ইস্যু আসবেই। যারা নতুন নতুন ইস্যুতে অস্বস্তিবোধ করে, তারা মূলত নতুন বাংলাদেশ চায় না। তারা আওয়ামী জাহেলিয়া নতুনরূপে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। রাষ্ট্র কাঠামোর যেখানে সংস্কার প্রয়োজন, সেখানেই একটি দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের ঘোষণা ছিল প্রধান উপদেষ্টার। অথচ প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান রূপ না দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি যেই রোডম্যাপ দিয়েছেন, সেই রোডম্যাপেই নির্বাচন হতে পারে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কোনো আপত্তি নাই। তবে অবশ্যই নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। তারপর পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সংসদ ও সরকার গঠন করতে হবে। দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে ভোট চায়।’
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল, ও সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল গাফফার খান, সহকারি সেক্রেটারি, এম আব্দুল্লাহ, এস এম সোহেল প্রমুখ।
রাজবাড়ী:
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মাধ্যমে গণভোট প্রদানসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজবাড়ীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজবাড়ী জেলা শাখার আয়োজনে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত রাজবাড়ী-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অ্যাড. মো. নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজবাড়ী জেলা শাখার নায়েবে আমীর মো. হাসমত আলী হাওলাদার, সেক্রেটারী মো. আলিমুজ্জামান, রাজবাড়ী- ২ আসনের বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী মনোনিত সংসদ সদস্য প্রার্থী মো: হারুন অর রশীদ,জেলা কর্মপরিষদ সদস্য প্রফেসর মো. হেলাল উদ্দিন, পাংশা পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর আমীর কাজী ফরহাৎ জামিল রুপুসহ অনেকেই বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, এই দাবিগুলো বাস্তবায়িত হলে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে জনগণ ও সরকার বুঝতে পারবে কারা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হলে ফ্যাসিবাদ ও একনায়কতন্ত্রের পথ রুদ্ধ হবে। তাই ষড়যন্ত্র করে এটি ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। নভেম্বরের মধ্যে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান তারা। এতে শুধু জামায়াত নয়, গোটা জাতির মঙ্গল হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।