ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে আনোয়ার গার্মেন্টস ও কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা ভয়াবহ আগুন প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে দুর্ঘটনা স্থলে সংক্ষিপ্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘পোশাক কারখানার নাম আনোয়ার গার্মেন্টস। সেটার আগুন গতকাল নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। কেমিক্যালের গোডাউনটা আলম ট্রেডার্স নামে পরিচিত। আর এটির আগুন দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কেমিক্যালের দাহ্য ড্রেনেজ করতে আরও ৭২ ঘণ্টার মত লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটা একটা কেমিক্যাল গোডাউন এবং এখানে প্রায় ছয় সাত ধরনের বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে। যেটার মাত্রা এখনো আমরা যাচাই বাছাই করতে পারিনি। তবে পুরো গোডাউন ভরা যেই বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য এটা আমরা ধাপে ধাপে প্রোগ্রেসিভ ওয়েতে ড্রেন আউট করছি। পানি দিয়ে ফায়ার ফ্লোট করে এটাকে আমরা ড্রেন আউট করছি ধাপে ধাপে। এটা সময় সাপেক্ষ একটি বিষয়। আমরা সিস্টেমেটিক কাজ করছি। আমরা টেকনোলজি এপ্লাই করছি, ড্রোন দিয়ে দেখছি।’
সার্চ অপারেশন ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আলম ট্রেডার্সের ভবনটা কিন্তু অনেকটা আগেই ড্যামেজ হয়েছে। আমরা যে ড্রোন ভিউটা পেয়েছি এটা অনেকাংশে ড্যামেজ হয়েছে। যেহেতু এটা লম্বা সময় ধরে একটা তাপমাত্রা ক্রিয়েট হয়েছে সেই তাপমাত্রার কারণে এই ভবনের কনস্ট্রাকশন যে পিলারগুলো আমরা দেখলাম সেটা অনেক অংশ ড্যামেজ। তাই এখানে যেকোনো সার্চ অপারেশন করাটা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকিটা এড়ানোর জন্য আমরা প্রটেকশন নিয়ে ধাপে ধাপে কাজ করছি। সার্চ অপারেশন চালানোর জন্য আরও সময় লাগবে এবং আমাদের হয়তো আরও ৩৬ থেকে ৭২ ঘণ্টাও আমাদের অপেক্ষা করা লাগতে পারে।’
ভেতরে মানুষ এখনও আটকা পড়ে আছে কিনা জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই পরিচালক বলেন, ‘আলম ট্রেডার্সের মূল ফটক তালা মারা ছিল। এটা হাইড্রলিক স্প্রেডার দিয়ে এবং কাটার দিয়ে কেটে তারপরে খুলতে হয়েছে। সুতরাং ধারণা করা হচ্ছে যে এখানে হয়তো মানুষ ছিল না। তারপরেও সার্চ অপারেশন না চালানো পর্যন্ত আমরা বলতে পারবো না যে এখানে কত মানুষ ছিল অথবা ছিল না। এটা আমাদের ওই অপারেশনের পরেই আমরা নিশ্চিত হতে পারবো।’
কেমিক্যালের তেজস্ক্রিয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই কেমিক্যালটা অবশ্যই ক্ষতিকর এবং এখান থেকে যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াচ্ছে এটা ৩০০ গজ দূরে রেডিয়েশন থাকতে পারে। কিন্তু বেসিক্যালি এই যে তেজস্ক্রিয়তা, এটা কিন্তু ৪০০ থেকে ৫০০ গজ পর্যন্ত থাকবে। আমরা যে এরিয়াতে রয়েছি এটা সম্পূর্ণ হ্যাজার্ডস একটা এরিয়া। সুতরাং এখান থেকে দূরে চলে যাওয়াটাই শ্রেয়। এখানে না থাকাটাই ভালো। কারণ, এই তেজস্ক্রিয়তার কারণে শারীরিক ক্ষতি হবে এবং ব্লাডে এটা মিশে যাচ্ছে। সুতরাং এই তেজস্ক্রিয়তার জন্য এখানে আশেপাশের লোকজনকে নিরাপদে থাকতে আমরা ইতোমধ্যে মাইকিং করেছি। মসজিদের মাধ্যমেও মাইকিং করে আমরা বলেছি এই এলাকাটা নিরাপদ নয়।’
কেমিক্যাল গোডাউনটি অবৈধ ছিল জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউনের একটা লিস্ট করেছিলাম। সেখানে আলম ট্রেডারস এর নামও আছে। এখানে তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। যেসব অবৈধ গোডাউন আছে একদিনে তো আর তা সব বন্ধ করা সম্ভব না। ধাপে ধাপে হচ্ছিল।’
এর আগে, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে এই কেমিক্যাল গোডাউন ও গার্মেন্টসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ১২টির বেশি ইউনিট। ভবনটিতে রাসায়নিক থাকায় এবং প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে ভেতরে প্রবেশ করে উদ্ধার কাজ চালাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়।
এখন পর্যন্ত আগুনে পোড়া ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে পুড়ে তাদের দেহ ছাই হয়ে গেছে। মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।