রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাসজুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। রাকসু নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দুই দিন। অনুষদ থেকে করিডোর, চায়ের আড্ডা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সব জায়গায় এখন নির্বাচনি আলোচনা ও প্রচারের রেশ। প্রার্থীদের হাতে লিফলেট, ব্যানার-পোস্টারে ভরে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। এই মুহূর্তে নবীন ভোটারদের কৌতূহল–এই নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যিই কী বদল আসবে? এছাড়া, দীর্ঘ অ্যাকাডেমিক জীবনে রাকসু তাদের জন্য কতটা কার্যকর হবে? স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও তাদের বিশ্বাস, রাকসু হলো ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র চর্চার এক বড় সুযোগ এবং যেখানে তারাও অংশ নিতে চায়।
বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২৪-২০২৫ সেশনের নবীন শিক্ষার্থী মো. আবির হুসাইনের জানান, ‘আমি যেহেতু ক্যাম্পাসে নতুন আসছি, আমার রাকসু সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই। তারপরও ক্যাম্পাসে নতুন এসেই এমন একটা উৎসবমুখর নির্বাচন দেখতে পারছি এতে আমি খুবই আনন্দিত এবং আরও এটা ভেবে ভালো লাগছে। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর রাকসু হচ্ছে এবং আমি সেই রাকসুতে ভোট দিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছি।’
তিনি আরও জানান, ‘নির্বাচনে যে বা যারাই নির্বাচিত হোক, তাদের কাছে শিক্ষার্থীরা আশা রাখবে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব এবং সকলের জন্য নিরাপদ গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থী এবং রাকসু ভবনের মধ্যে চলাচল যেন সহজ হয়, সেই ব্যবস্থাও প্রয়োজন। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি চাই, ক্যাম্পাসে স্টেশন চালুর ব্যবস্থা করা হোক। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিও প্রত্যাশা করেন তিনি।’
আরেক নবীন শিক্ষার্থী নাবিলা ফারহানা বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন হিসেবে পা রাখার পর থেকেই রাকসু সম্পর্কে শুনে আসছি—একটি সংগঠন, যা শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় এটি নির্বাচনি উচ্ছ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আমি বিশ্বাস করি, রাকসু হওয়া উচিত এমন একটি সক্রিয় প্ল্যাটফর্ম, যা শিক্ষার্থীদের সমস্যা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরে তার কার্যকর সমাধানে ভূমিকা রাখবে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সিট সংকট, আবাসিক হলে খাবারের মান, পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশের উন্নয়ন—এসব বিষয়ে রাকসুর নিয়মিত মনিটরিং ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ক্যাম্পাসে শাটল বা ইলেকট্রনিক গাড়ি চালুর দাবি বাস্তবায়নেও রাকসু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, কারণ বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার স্থান। রাকসু যেন এমন একটি পরিবেশ গড়ে তোলে, যেখানে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারে, সেটিই আমাদের প্রজন্মের প্রত্যাশা। রাকসু কেবল একটি নির্বাচিত কমিটি নয়, এটি শিক্ষার্থীদের বিশ্বাসের প্রতীক। তাই প্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল, জবাবদিহিমূলক ও প্রগতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে রাকসুকে আরও শক্তিশালী করতে হবে—যাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হয় আরও শিক্ষার্থী-বান্ধব, নিরাপদ ও কল্যাণমুখী একটি প্রতিষ্ঠান।’
নির্বাচন সম্পর্কে অনুভূতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক নবীন শিক্ষার্থী নূরে তন্নি জানান, ‘সামনে রাকসু নির্বাচন উপলক্ষ্য ক্যাম্পাসের এই উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে খুব ভালো লাগছে। নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে আসার সঙ্গে সঙ্গেই এমন একটি রাকসু নির্বাচন দেখতে পাবো এটা কল্পনাতেও ভাবিনি। বহু প্রতীক্ষার পর ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাকসু নির্বাচন। এক কথায়, পুরো ক্যাম্পাসে এখন যে উত্তেজনা এবং যে আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে তা দেখে আসলেও আলাদা একটা আনন্দ অনুভূত হচ্ছে মনে।’
ফোকলোর অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের আরেকজন নবীন শিক্ষার্থী আহমেদ সুভ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে রাকসু সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা নেই। তবে আমি আশা করি, নির্বাচিত যারা প্রতিনিধিত্ব করবে তাদের নিজস্ব মতামত বা দলীয় মতামত অনুযায়ী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে ক্যাম্পাসের যে কোনো কাজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরামর্শ করে তারপর একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ।’
তিনি আরও বলেন, ‘নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার আশা, ক্যাম্পাসটি শিক্ষার্থীবান্ধব হোক। এছাড়াও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধান করা, ডিপার্টমেন্ট থেকে অতিরিক্ত ফি হ্রাস করা, এবং নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া। আমি চাই, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যাতায়াতের সুবিধার জন্য ইলেকট্রনিক গাড়ির ব্যবস্থা করা হোক।’