Saturday 18 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাশুল সমস্যা সমাধানে এক সপ্তাহ সময়, অন্যথায় বন্দর বন্ধের হুঁশিয়ারি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ অক্টোবর ২০২৫ ২০:০৬ | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ২১:১৩

চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন খাতে ৪১ শতাংশ হারে বাড়ানো মাশুল নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। অন্যথায় চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এছাড়া, বর্ধিত মাশুল আরোপের প্রতিবাদে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন আগামীকাল (রোববার) থেকে প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর নেভি কনভেনশন হলে এক সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী এ ঘোষণা দেন। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবায় ‘অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত’ মাশুল আরোপের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজারস ফোরাম এ সভার আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

সভায় আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে বন্দরের যে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে, এটার বিষয়ে সমাধান চেয়েছিলাম। আনঅফিসিয়ালি আমাদের জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা সনদ স্বাক্ষর নিয়ে ব্যস্ত আছেন। এজন্য উনি এটাতে মনযোগ দিতে পারেননি। সেজন্য আমরা আজ (শনিবার) এ প্রতিবাদ সভা আহ্বান করেছি। স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য, এর পর যদি এটাতে মনোনিবেশ করা না হয়, মনযোগ দেওয়া না হয়, তাহলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বেশিদিন আর অপেক্ষা করবে না। একটা কর্মসূচি আমাদের অবশ্যই দিতে হবে।’

কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আগামীকাল (রোববার) থেকে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবে। আরও দুটি সংগঠন, আমি তাদের নাম বলছি না, একইভাবে তাদের কর্মবিরতি পালন করবে। আমরা আজ (শনিবার) সরকারকে আরেকটা স্মারকলিপি দেব। এক সপ্তাহের মধ্যে যদি এটা সমাধান করা না হয়, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

এ সময় আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী এসব প্রস্তাবে ব্যবসায়ীরা রাজি আছেন কি না জানতে চাইলে সবাই হাত তুলে এতে সমর্থন দেন।

সভায় এফবিসিসিআই ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক আমীরুল হক বলেন, ‘বন্দরের ট্যারিফ বাড়াবেন- সবার সঙ্গে বসেন, কোন কোন জায়গায় ট্যারিফ বাড়াতে হবে ঠিক করেন। স্টেকহোল্ডারদের ডাকেন। সেটা না করে আপনারা আপনাদের ইচ্ছেমতো ট্যারিফ বাড়িয়ে দেবেন, কোনো কারণে যদি চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়, যারা এটা করেছে, তারা দায়ী থাকবেন, আমরা কেউ দায়ী থাকব না এটার জন্য। মগের মুল্লুক মনে করা হয়েছে চট্টগ্রামকে, যারা ট্যারিফ আরোপ করেছেন, তারা ভেবেছেন আমরা ট্যারিফ চাপিয়ে দিলাম, মগের মুল্লুকের ওদের কথার কোনো দাম নেই। এটা কিন্তু হতে পারবে না।’

‘আমাদের বিজ্ঞজনেরা এমন সময় এ কাজটা করলেন, যখন দেখলেন এফবিসিসিআই নেই, চট্টগ্রাম চেম্বার নেই, বিজিএমইএতে যখন প্রশাসক, তখন এ কাজটা করেছে। আমরা এটা হতে দেব না, দেব না, দেব না। আমরা বিদেশি অপারেটরের বিপক্ষে না। যেকোনো বিদেশি অপারেটরকে দেন দক্ষতা বাড়ানোর জন্য, আমরা (ব্যবসায়ী) পক্ষে আছি। কিন্তু চট্টগ্রাম পোর্টের ট্যারিফ বাড়িয়ে বিদেশি অপারেটর হবে না।’

স্বাগত বক্তব্যে বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এমএ সালাম বলেন, ‘বন্দরের নতুন ট্যারিফে ব্যবসায়ীরা ইনসিকিউরড ফিল করছেন। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সমস্বরে না বললে সমাধান হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর সেবাকেন্দ্র, লসে নেই। আড়াই-তিন হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কেন এত কারসাজি। ট্রেইলর ধর্মঘট শুরু হয়েছে, আমাদের কনটেইনার যাবে না। স্টেকহোল্ডারদের ডেকে আলোচনা করুন। এর পর বন্দরের ট্যারিফ পুননির্ধারণ করার দাবি জানাই।’

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রামের সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব বলেন, ‘ট্রাম্পের ট্যারিফে পৃথিবীতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে সরকার আমেরিকা গিয়ে ট্যারিফ কমায় সেই সরকার বন্দরে ট্যারিফ বাড়ায়। এতে দেশের ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এ ট্যারিফ অযৌক্তিক মনে করি।’

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির লাইফ লাইন। এটা শেষ করতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। সিঅ্যান্ডএফের ১৩ হাজার শ্রমিক কর্মচারী এ খরচের বোঝা নিয়ে কাজ করতে অপারগ।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক অমিয় শঙ্কর বর্মণ, বিজিএমইএ’র পরিচালক এমডিএম মহিউদ্দিন, বন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল, চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. পারভেজ সাজ্জাদ আকতার।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর