ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের অন্যতম মাহির রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে মাহিরের মা রেখা আক্তার নিজেই ছেলেকে নিয়ে বংশাল থানায় এসে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। পুলিশ সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
জানা যায়, খুনের ঘটনায় মাহিরের সম্পৃক্ততা পেয়ে গতকাল রাত তিনটার দিকে পুলিশ তার খালু ইমরান শেখকে ধরে নিয়ে যায়। এই খবর পেয়ে মাহিরের মা সকাল ৭টার দিকে তাকে নিয়ে বংশাল থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে সম্পৃক্ততা না পেয়ে সকাল ছয়টার দিকে পুলিশ ইমরান শেখকে ছেড়ে দেয়।
এদিকে মাহিরকে যে তার মা থানায় সোপর্দ করেছেন সেটা স্বীকার করেনি পুলিশ। তবে এ হত্যাকাণ্ডে তিনজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আমিনুল কবীর বলেন, ‘আমরা এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছি। শিগগিরই তা জানানো হবে।’
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার (১৯ অক্টোবর) রাতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। জোবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়া, তিনি ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
সহপাঠী ও পুলিশের তথ্যমতে, ভবনটির একটি বাসায় বর্ষা নামে উচ্চমাধ্যমিকের এক ছাত্রীকে পড়াতেন জোবায়েদ। তার মরদেহ উদ্ধারের পর ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বংশাল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই ছাত্রীর পাশাপাশি পুলিশের একাধিক টিম রাতে মাহিরের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অভিযান চালায়। পরবর্তী সময়ে মাহিরের মা তাকে থানায় দেবে বলে জানান। সেই কথা অনুযায়ী সকালবেলা তিনি ছেলেকে থানায় সোপর্দ করেন।
এদিকে খুনের একদিন পার হয়ে গেলেও মামলা হয়নি। জোবায়েদের পরিবার বলছে, তারা গতকাল দিবাগত রাত ১২টা থেকে মামলা করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু মামলা করতে পারেনি। জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বলেন, ‘আমরা পাঁচ জনকে আসামি করে মামলা করতে চেয়েছি— শিক্ষার্থী বর্ষা, তার বাবা-মা, বর্ষার প্রেমিক মাহির রহমান এবং মাহিরের বন্ধু নাফিসকে। কিন্তু বংশাল থানার ওসি মামলা নিতে রাজি হননি।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘ওসি বলেছেন, এতজনের নাম দেওয়া ঠিক হবে না। বর্ষার বাবা-মায়ের নাম দিলে মামলাটা নাকি হালকা হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা তাদের নাম দিতে চাই। আমরা ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’
মামলা নিতে বিলম্বের কারণ হিসেবে শুরুতে বলা হয়, রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ওসি থানায় ছিলেন না। পরে তিনি আসার পর অভিযুক্তের সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দেন, যা দেরি আরও বাড়ায়। এ বিষয়ে বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তারা যাদের নাম দিতে চান, আমরা সেই নামেই মামলা নেব। শুধু পরামর্শ দিয়েছি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।’
এদিকে জোবায়েদ হত্যার প্রতিবাদে জবি শিক্ষার্থীরা বংশাল থানার সামনে অবস্থান নিয়ে দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। তারা তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এবং কিছু সময়ের জন্য আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায়। নিহতের স্মরণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই দিনের শোক ঘোষণা করেছে। সেইসঙ্গে ২২ অক্টোবর নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে।