Wednesday 22 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলোচিত লামিয়া ধর্ষণ মামলায় আসামিদের কারাদণ্ড

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২২ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৩৩ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৫০

পটুয়াখালী জজ কোর্ট ভবন। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী: দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে জুলাই বিপ্লবের শহীদ জসিম উদ্দিনের কলেজ পড়ুয়া কিশোরী কন্যা মোসাঃ লামিয়া (১৭)-কে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত মো. সাকিব মুন্সী (১৭), মো. সিফাত মুন্সী (১৭) ও ইমরান মুন্সি (১৭)-কে ১০ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এছাড়াও এই মামলায় পর্নগ্রাফী আইনে সাকিব মুন্সি ও সিফাত মুন্সীকে আরো তিন বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (২২ অক্টোবর) পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক নিলুফার শিরিন আসামিদের উপস্থিতিতে এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আল নোমান।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এই মামলাটি বহুল আলোচিত। অভিযোগপত্রে এই মামলায় তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়। ১৬ জনের স্বাক্ষী শুনানী শেষে আজকে আদালত রায় প্রদান করেছেন। রায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯-এর ৩ ধারায় তিনজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যেহেতু অভিযুক্তরা কিশোর, তাই সেই অনুযায়ী আইনের বিধান অনুসারে এই দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সী এই দুইজনকে পর্নগ্রাফী আইনে আরো তিন বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই সাজা একটির পর একটি কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে আলোচিত এই মামলার রায়কে ঘিরে সকাল থেকে আদালত প্রঙ্গনে কঠোর নিরাত্তার ব্যবস্থা হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসামিদের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে নিয়ে আসা হয়। মামলার রায় শোনার জন্য আদালত প্রাঙ্গনে উৎসুক মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মৃতঃ মো. জসিম হাওলাদারের মেয়ে মোসাঃ লামিয়া (১৭)। সে দুমকি সরকারি জনতা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। মামলার বিবাদীরা পূর্ব পরিচিত। দুই নং বিবাদী মো. সিফাত মুন্সী তার সহপাঠি।

চলতি বছর ১৮ মার্চ লামিয়া তার দাদা বাড়িতে গিয়ে পিতার কবর জিয়ারত শেষে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে নানা বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে লামিয়া তার মা মোসাঃ রুমা বেগমের (৩৭) সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় পায়ে হেঁটে দুমকির পাঙ্গাশিয়ার আলগী ১নং ওয়ার্ডের মৃত জলিল মুন্সির বাড়ির সামনের সড়ক অতিক্রম করছিল। এসময় বিবাদীরা লামিয়ার অজ্ঞাতসারে তাকে অনুসরন করে এবং কিছুক্ষন পর সামনে এসে লামিয়ার দুই হাত ও মুখ চেপে ধরে। এক পর্যায়ে পাশের একটি বাগানের মধ্যে নিয়ে প্রথমে মো. সাকিব মুন্সী (১৭) ও পরে মো. সিফাত মুন্সী (১৭) লামিয়াকে ধর্ষণ শেষে বিবস্ত্র অবস্থায় একাধিক ছবি তোলে। ধর্ষণ শেষে অভিযুক্তরা বিষয়টি কাউকে না জানানোর হুমকি দেয় এবং যখন ইচ্ছা হবে তখন তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে বলে জানায়। যদি রাজি না হয় তাহলে লামিয়ার তোলা নগ্ন ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে দিবে বলে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত চলে যায়। এরপর সেখানে কোনো লোকজন নেই দেখে লামিয়া তার নানা বাড়ি চলে যায় এবং বিষয়টি তার মাকে জানায়।

এদিকে লামিয়া ঘটনাটি তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এবং সাময়িক সুস্থ হয়ে পরদিন দুমকি থানায় লামিয়া নিজে বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সজ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করে।
এই মামলায় দুমকির নলদোয়ানী গ্রামের মৃত মামুন মুন্সীর ছেলে মো. সাকিব মুন্সী(১৭) ও একই গ্রামের সোহাগ মুন্সীর ছেলে মো. সিফাত মুন্সী(১৭)-কে আসামি করা হয়।

আলোচিত এই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান দুমকি থানার ইনচার্জ তদন্ত মো. রফিকুল ইসলাম। মামলাটি তদন্তকালে তিনি এই ঘটনায় তিনজনের সংস্পৃক্ততা পান এবং গত ১ মে আদালতে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার বাসা থেকে জুলাই আন্দোলনের শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা লামিয়ার (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর