ঢাকা: পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলালের বহিষ্কারাদেশ ১৩ মাস পর প্রত্যাহার করেছে বিএনপি। এতে মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রুহুল আমিন দুলালসহ আরও সাতজন নেতাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১২ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রুহুল আমিন দুলালকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে তিনি আবেদন করেন। দীর্ঘ ১৩ মাস পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য (দফতরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘রুহুল আমিন দুলালসহ সাত জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এদিকে রুহুল আমিন দুলালের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের খবরে মঠবাড়িয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন দুলালের বাস ভবনের সামনে ভীড় করেন। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে দুলালকে বরণ করে নেন। তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বিকেলে উপজেলা মডেল মসজিদে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়।
রুহুল আমিন দুলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ৪৪ বছর যাবত এই দলের সঙ্গে জড়িত। আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৮০ সালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যোগদানের মাধ্যমে। ৪৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দলের নীতি আদর্শ পরিপন্থী এবং দলবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করি নাই।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি ১৪ মাস দলের বাইরে ছিলাম। অর্থাৎ দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলাম। আমার বহিষ্কারে আমার চেয়ে আপনারা বেশি কষ্ট পেয়েছেন। আমার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের জন্য আপনারা দোয়া করেছেন অনেক মা বোনেরা রোজা রেখেছেন। আপনারা আমার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার চেয়েছেন, আপনাদের মনের ভাষা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মহোদয় উপলব্ধি করতে পেরে আজ আমার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান কোনো প্রকার উশৃঙ্খলতা করা যাবে না। সবাই শান্ত থাকবো। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেব।’
পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম কিসমত সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সময়োপযোগী এবং সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। রুহুল আমিন দুলাল দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতা। যেকোনো কারণে হোক দল তাকে বহিষ্কার করেছিল। তবে এখন বহিষ্কারদাশে প্রত্যাহার করায় সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
রুহুল আমিন দুলাল ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ছিলেন। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় ত্রয়োদশ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করেন কি? জবাবে কিসমত বলেন, ‘এটা দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাকে মনোনয়ন দেবেন তার সঙ্গে আমরা সবাই কাজ করবো। আর কাকে মনোনয়ন দেবে সেটা শিগগিরই জানতে পারবেন।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলে ফিরিয়ে এনেছে। আমি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে তাকে দলে স্বাগত জানাই।’