Friday 24 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুরু হচ্ছে শুটকি মৌসুম
সাগরে যেতে উপকূলে শত শত জেলে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৩৫ | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ২০:৫৭

নৌকা গোছাচ্ছেন জেলেরা। ছবি: সারাবাংলা

বাগেরহাট: বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হচ্ছে শুটকি মৌসুম। এ মৌসুমকে ঘিরে বাগেরহাটের মোংলার উপকূলের নদ-নদীতে জড়ো হয়েছে শত শত জেলে ট্রলার। বনবিভাগের কাছ থেকে পাস-পারমিট নিয়ে শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে সমুদ্রে যাত্রা করবেন এসব জেলেরা। এখন মোংলায় অবস্থা নিয়ে এসব জেলেরা তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ট্রলার ভর্তি করছেন।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, আগামী ২৬ অক্টোবর থেকে দুবলার চরে শুরু হচ্ছে শুটকি মৌসুম। শুটকি মৌসুম শেষ হবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ মৌসুমের ৪ মাস ধরে তারা দুবলার আলোরকোল, অফিসকেল্লা, নারকেলবাড়ীয়া ও শেলার চরে অবস্থান করবেন। চরগুলোতে জেলেদের থাকার জন্য ৯০০ ঘর বাঁধার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর দোকানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৮০টি।

বিজ্ঞাপন

এরমধ্যে রয়েছে মুদি, তেল, ওষুধ, সেলুন ও হোটেলসহ নানা পণ্যের দোকান। এছাড়া মাছ বেচাকেনার জন্য ১০০টি ডিপোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ মৌসুমকে ঘিরে চরগুলোতে প্রায় ১০ হাজার জেলে-মহাজনের সমাগম ঘটবে। তারা চরে থাকার জন্য অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করবেন। নির্মাণ করবেন মাছ শুকানোর চাতাল ও ট্রলার থেকে মাছ ওঠানামানোর জন্য জেটি এবং ঘাট। এসব কাছে জেলেরা কোনোভাবেই সুন্দরবনের কোনো প্রজাতির গাছপালা কাটতে ও ব্যবহার করতে পারবেন না। কেউ যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বনের ক্ষতিসাধনের অপচেষ্টা চালান, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নিষেধাজ্ঞা মেনেই চরে ঘর তোলাসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে জেলেরা প্রয়োজনীয় কাটপাট সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন।

মোংলার মহাজন কালাম ব্যাপারী ও লতিফ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা যে সময়টা দুবলার চরে থাকি, এই সময়টাই ঝড়, জ্বলোচ্ছাসের সময়। ঝড়, জ্বলোচ্ছাসের কারণে আমাদের মাছ ধরা ও শুকানোর কাজে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। ঝড়ে অনেক সময় ট্রলার ডুবে যায়। বৃষ্টিতে চরের মাছও পঁচে যায়। এতে আমাদের ভীষণ ক্ষতি হয়। তাই এসবের সঙ্গে যুদ্ধ করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়।’

জেলেদের মহাজন রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বনের গাছপালা কাটা ও ব্যবহার নিষেধ, তাই আমরা জাল ধরার জন্য কাঁকড়া, ঘর ও চাতাল নির্মাণের বাঁশ, বেড়া-চটকি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা বনের কোনো ক্ষতি করবো না।’

মহাজন মোস্তফা সানা বলেন, ‘একটি পরিপূর্ণ ট্রলার নিয়ে দুবলার চরে যেতে আমাদের ২০/২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। আমরা জেলে, এতো টাকা তো আমাদের নেই। তাই ধার-কর্জ করে নৌকা, জাল, বসতঘরের প্রয়োজনীয় মালামাল ও মানুষজন নিয়ে সাগরে যাচ্ছি। আবহাওয়া ভাল থাকলে ভাল মাছ পাবো, টাকা উঠবে, না হলে লোকসান দিয়ে ঘরে উঠতে হবে।’

জেলে কালাম শেখ বলেন, কয়েক বছর ধরে সাগরে জলদস্যু ছিল না। এখন আবার জলদস্যুতা বেড়েছে। গত বছরও আমার জেলেদের জিম্মি করো পৌনে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়েছে। আমাদের ভয় শুধু ডাকাতের। আমরা চাই প্রশাসনে কঠোর নজরদারি। আমরা যেন শান্তিতে মাছ ধরতে পারি।’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, গত মৌসুমে শুটকি থেকে বনবিভাগের ৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। আশা করছি এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, জেলেদের নিরাপত্তায় বনবিভাগের পাশাপাশি সেখানে থাকছে কোস্টগার্ডও।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর