থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের মা রানি সিরিকিত ৯৩ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে রাজপরিবার ও রাজপ্রাসাদের সদস্যদের জন্য এক বছরের শোককাল ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) এপির প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাতে তিনি মারা যান।
রাজপ্রাসাদ জানিয়েছে, একাধিক অসুস্থতার কারণে ২০১৯ সাল থেকে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ১৭ অক্টোবর তিনি রক্তে সংক্রমণের শিকার হন। ২০১২ সালে স্ট্রোকের পর থেকে সিরিকিত জনসমক্ষে ছিলেন না।
রাজমাতার মৃত্যুতে থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়ায় আসিয়ান নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে তার সফর বাতিল করলেও পরে তিনি জানান, কম্বোডিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিনি সফর করবেন। এই অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
রানি সিরিকিতের স্বামী কিং ভূমিবল আদুলাদেজ থাইল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় (৭০ বছর) সিংহাসনে ছিলেন। তিনি ১৯৪৬ সাল থেকে রাজত্ব করেন। প্যারিসে সঙ্গীত ও ভাষা অধ্যয়নের সময় তার সঙ্গে ভূমিবলের দেখা হয়। প্রথম দেখায় ভুল বোঝাবুঝি হলেও, পরে তাদের মধ্যে প্রণয় হয়। ১৯৪৯ সালে তাদের বাগদান হয় এবং তিনি ১৭ বছর বয়সে থাইল্যান্ডে বিয়ে করেন।
থাইল্যান্ডের বহু মানুষ দাতব্য কাজের জন্য এবং মাতৃসুলভ গুণের প্রতীক হিসেবে তাকে মনে রাখবেন। যে দেশে রাজপরিবারের সমালোচনা কঠোর লেসে-ম্যাজেস্ট্রি আইনের দ্বারা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, সেখানে তার মৃত্যু অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বিবেচিত হবে। এমনকি মৃত রাজকীয়দের অপমান করলেও শাস্তির বিধান রয়েছে এই আইনে।
সিরিকিত কিতিয়াকারা ১৯৩২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন থাইল্যান্ডের ফ্রান্সে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের কন্যা। তিনি ফরাসি ফ্যাশন ডিজাইনার পিয়েরে বালমাঁর সঙ্গে কাজ করেন এবং ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প সংরক্ষণে সহায়তা করে থাইল্যান্ডের রেশম শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার কৃতিত্ব তাকে দেওয়া হয়।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি রাজার সঙ্গে প্রত্যন্ত গ্রামে ভ্রমণ করে গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে সহায়তা করেছেন।
১৯৭৬ সাল থেকে তার জন্মদিন (১২ আগস্ট) থাইল্যান্ডের জাতীয় মাতৃ দিবস ও একটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
তার একমাত্র ছেলে, বর্তমান রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন (দশম রামা) ২০১৬ সালে ভূমিবলের মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন। ২০১৯ সালে তার অভিষেকের পর সিরিকিতের আনুষ্ঠানিক উপাধি হয় রাজমাতা।
থাইল্যান্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্র রাজনীতির ঊর্ধ্বে হলেও, অভ্যুত্থান ও অস্থিতিশীল সরকারের আধুনিক ইতিহাসে রাজমাতা সিরিকিত কখনো কখনো হস্তক্ষেপ করেছেন।
১৯৯৮ সালে তিনি তার জন্মদিনের ভাষণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চুয়ান লিকপাইয়ের পাশে থাকার জন্য থাইদের প্রতি আহ্বান জানান। তার অবস্থান বিরোধী দলের অনাস্থা প্রস্তাবের পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা দেয়।
পরে তিনি রাজকীয়পন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন ‘পিপলস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি’ (PAD)- এর সঙ্গে যুক্ত হন, যারা থাকসিন সিনাওয়াত্রা বা তার মিত্রদের নেতৃত্বাধীন সরকারগুলোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাহায্য করেছিল।
২০০৮ সালে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে নিহত পিএডি-এর একজন কর্মীর শেষকৃত্যে তিনি যোগ দেন, যা এক বছর আগে থাকসিনপন্থী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে রাজকীয় সমর্থনকে প্রকাশ করেছিল।