বরিশাল: বরিশালে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মো. রাকিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধান গবেষণা সড়কের রাসেল গাজী (৪৫), একই ওয়ার্ডের গ্যাস টারবাইন এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা মো. রোকন খান (৩৩), ধান গবেষণা সড়কের খেয়াঘাট এলাকার রাজিব জমাদ্দার (৩৫) ও জাহিদ হাওলাদার (৩৬)। তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রোকন খান পলাতক রয়েছেন। তারা চারজনই পেশায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক ছিলেন।
মামলার অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার সময় গৃহবধূর বয়স ছিল ১৮ বছর। সে ধান গবেষণা সড়কের খ্রিস্টানপাড়া এলাকায় থাকত। আসামি রাসেল গাজী তাদের প্রতিবেশী। ওই বছরের ৯ নভেম্বর বিকেলে গৃহবধূকে বাসায় একা রেখে তার মা-বোন বেড়াতে যায়। তখন প্রতিবেশী রাসেল ঘরে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। গৃহবধূ ঘরে থাকা বঁটি হাতে নিলে রাসেল পালিয়ে যায়। মা ফিরে এলে এ ঘটনা তাকে জানায় সে।
পরে গৃহবধূর মা রাসেলের পরিবারের কাছে নালিশ দেয়। এতে রাসেল আরও ক্ষিপ্ত হয়। পরদিন গৃহবধূ তার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্বামীর কর্মস্থলের দিকে রওনা হন। ঘর থেকে ১ লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে যান। তিনি একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় উঠলে চালক তাকে অন্যত্র নিয়ে যায়। সেসময় তিনি চিৎকার দিলে আসামিরা তাকে মারধর করে। পরে নগরীর ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের খ্রিস্টানপাড়ার জঙ্গলে মধ্যে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সে অজ্ঞান হলে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় গণধর্ষণের অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন কোতোয়ালি মডেল থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউর রহমান। আদালত ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে চার ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
ট্রাইব্যুনালের পেশকার অজিবর রহমান জানান, রায় ঘোষণার সময় রোকন খান ছাড়া অন্য তিন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল। রায় দেওয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার বিচার চলাকালীন রোকন খান জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপন করেছে। গ্রেফতারের পর ৪ আসামি অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। তবে পুলিশি তদন্ত শেষে এজাহারে নামধারী চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আব্দুল মান্নান মৃধা জানান, আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ধর্ষিতার পরিবার।