বগুড়া: বগুড়ার শেরপুরে আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়ককে টার্মিনাল বানিয়ে ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। মহাসড়ক এলাকায় পরিবহন থেকে টাকা তোলা বন্ধের নির্দেশ থাকলেও শেরপুর তা মানছে না পৌরসভা। পৌর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ইজারা দেওয়ার মাধ্যমে অবৈধ টাকা আদায়ের বৈধতা পাচ্ছেন ইজারাদাররা।
পৌর পরিষদের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামি মাসের ৫ নভেম্বর দরপত্র বিক্রি করা হবে। পরদিন দরপত্র দাখিল ও উন্মুক্ত করা হবে। সে অনুযায়ী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এক বছর টোল আদায় করা হবে।
জানা যায়, কাগজে-কলমে বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় বাস-ট্রাক ও অটোরিকশা রাখার কেন্দ্রীয় টার্মিনাল থাকলেও বাস্তবে তা নেই। তবুও পৌর কর্তৃপক্ষ টার্মিনাল ইজারা দিতে দরপত্র আহবান করেছে। স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, শহরের ধুনটমোড় এলাকায় নিজস্ব জায়গায় টার্মিনাল রয়েছে। সেটি প্রতিবছরই ইজারা দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। শেরপুর শহরের ধুনটমোড় এলাকায় পৌরসভার মোট তিন একর জায়গা রয়েছে। এরমধ্যে মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য কিছু অংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আর সিংহভাগ জায়গায় মার্কেটের দোকানঘর। এখানে পনের শতক জায়গার ওপরে ঝুলছে দুটি সাইনবোর্ড। একটিতে লেখা রয়েছে ট্রাক টার্মিনাল, অপরটিতে বাস টার্মিনাল। কিন্তু সেখানে গাড়ি রাখার মতো পর্যাপ্ত কোনো জায়গা নেই।
এছাড়া সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রাখার কোনো জায়গা না থাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন শেরপুর-কাজীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ধুনটমোড়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া করতোয়া গেটলক বাসগুলো শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার পশ্চিম পাশে মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে রেখে যাত্রী তোলা হয়।
একাধিক পরিবহন মালিক অভিযোগ করে বলেন, ইজারাদারের লোকজন জোর করেই মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর থেকে প্রতিদিন টোল আদায় করে থাকেন। এতে ব্যস্ততম ধুনট মোড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এরপরও বন্ধ হয় না ইজারার নামে টোল আদায়। অথচ স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে টার্মিনাল ছাড়া কোনো সড়ক বা মহাসড়ক থেকে টোল উত্তোলন না করার নির্দেশনা রয়েছে।
মালিক সমিতির নেতা সেলিম রেজা জানান, শেরপুর পৌরসভায় প্রকৃতপক্ষে কোনো টার্মিনাল নেই। তাই তারা ব্যক্তিমালিকানাধীন তিনটি জায়গা টার্মিনাল হিসেবে ভাড়া নিয়ে বাস-ট্রাক রাখেন। এছাড়া মহাসড়কের পাশেও রাখা হয় রকমারি যানবাহন। তবুও পৌর কর্তৃপক্ষ টার্মিনাল ইজারার নামে মহাসড়ক থেকে প্রতিটি গাড়ির বিপরীতে টোল আদায় করছে। এটা এক ধরনের চাঁদাবাজি।
শেরপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শামিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই পৌরসভার বিভিন্ন টার্মিনাল ইজারা হয়ে থাকে। এবারো ২০২৬ সালের জন্য ইজারা দিতে দরপত্র আহবান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও শেরপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. মনজুরুল আলম জানান, এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। তাই অনেক কিছুই এখনো অজানা। তবে কেউ অবৈধভাবে ইজারার নামে টাকা আদায় করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।