ঢাকা: স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সুখেই সংসার চলছিল আজাদ আবুল কালামের। তাকে আজ বাসা থেকে বের হতেও দিতে চাননি তার স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া। ‘বিকেলে ফিরব’ স্ত্রীকে এমনটাই বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন আবুল কালাম। কিন্তু সেই তিনি ফিরেছেন, তবে লাশ হয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবুল কালামের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি এলাকায়। কিন্তু জীবিকার তাগিদে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জে। আবুল কালাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি ট্র্যাভেল এজেন্সি পরিচালনা করতেন। ব্যবসায়িক কাজে নিয়মিত ফার্মগেট এলাকায় যাতায়াত করতেন তিনি।
প্রতিদিনের মতো আজও কাজে বের হয়েছিলেন আবুল কালাম। এ বিষয়ে স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া বলেন, আজকে তাকে আমি বিদায় দিতে চাইনি। দরজা লাগাতেও যাইনি। বলেছে বিকালে ফিরবে। কিন্তু ফিরল না।
এদিকে, মৃত্যুর কয়েকঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেষ স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন আবুল কালাম। আর তাতে লিখেছিলেন, ‘ইচ্ছে তো অনেক। আপাতত যদি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে পারতাম।’
নিহত আবুল কালামের ভাবি আছমা বেগম বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে আবুল কালামের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। সে বলছিল দু-এক দিনের মধ্যে বাড়িতে আসবে এবং আমি যেন ইলিশ মাছ কিনে রাখি। কিন্তু সে তো আর আসবে না।’
আবুল কালামের চাচাতো ভাই আব্দুল গণি বলেন, ‘সরকারের অবহেলার কারণে আমার ভাই মারা গেল। এখন তার পরিবারে দায় দায়িত্ব কে নেবে? নিজের চেষ্টায় ঢাকায় ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিলেন। এমন আকস্মিক মৃত্যু আমাদের জন্য এক অসম্ভব বেদনার।’
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) সামনে ৪৩৩ নম্বর পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়লে নিহত হন আবুল কালাম (৩৪) নামের এক পথচারী। এছাড়া, এই ঘটনায় ২ জন আহত হন।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে নিহতের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের সদস্যদের মেট্রোরেলে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির। এছাড়া, মেট্রোরেলের পিলার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড পড়ে এক পথচারী নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোরেলে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। সে সময় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এ ঘটনায় বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়। আজকের ঘটনা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ল।